বাংলাদেশের চেয়ে কেন পিছিয়ে পাকিস্তান? - Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Latest

Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Mission: We champion human dignity, justice, and equality. Civic Vision: protect rights, fight injustice, and promote people-centred democracy. Vision: We envision a world with equal access to quality education for every child. Our initiative, "One World, One Identity, One Curriculum," embodies this fair, united future. Protecting Minorities: We are campaigning for a robust protection system for minority communities in Bangladesh, guaranteeing their safety, security, and equal citizenship.

Thursday, February 3, 2022

বাংলাদেশের চেয়ে কেন পিছিয়ে পাকিস্তান?

 


বাংলাদেশ সম্প্রতি তার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করেছে। ১৯৭২ সালে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশের জন্য 'bottomless basket' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে নরওয়েজিয়ান অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড এবং আমেরিকান অর্থনীতিবিদ জেআর পারকিনসন লন্ডন থেকে ‘বাংলাদেশ দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটিতে বলা হয়েছিল, “বাংলাদেশ উন্নয়নের একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। বাংলাদেশ যদি তার সমস্যার সমাধান করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে যেকোনো দেশ উন্নতি করতে পারে।” সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে যাওয়ার পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করেছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হওয়ার আগেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এটা সম্ভব হয়েছে জনগণের কঠোর পরিশ্রম ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।

৭০-এর দশকে, স্বাধীন বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি, দুর্ভিক্ষ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত একটি দেশ  হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত ছিল।
কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় ইতিবাচক দিকগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। বাংলাদেশ সব সময়ই তার বিভিন্ন কৃতিত্ব তুলে ধরে বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ার চেষ্টা করেছে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক নেতিবাচক দিক পিছনে ফেলে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ আবিদ হাসান কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যে দ্বিগুণ হবে তা ২০ বছর আগে পর্যন্ত কল্পনাও করা যেতো না। বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি একটি অর্থনৈতিক শক্তিশালায় পরিণত হবে। তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে পাকিস্তানের। যেকোনো দেশের উন্নয়নে মানবসম্পদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই বাংলাদেশ এখন শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বেশকিছু সূচকে। বিশ্বব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেছে। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি ০.৪  শতাংশ থেকে বেড়ে ৮.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের ১,৫৪৩ এর তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২,৫৫৪ হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি ৪১০ বিলিয়ন যেখানে পাকিস্তানের অর্থনীতির আকার ২৬০ বিলিয়ন। বাংলাদেশে বেশকিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পগুলো এই কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশকে তার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন উন্নয়ন মডেলের ক্ষেত্রে সর্বদা বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময়, বিশ্ব ব্যাংকের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ডালপালা বিস্তার করে চলেছে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ শিগগিরই এশিয়ার নতুন বাঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে।’

৫০ বছর পর বাংলাদেশ নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘অর্থনৈতিক বিস্ময়’ হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। যদিও বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের অংশ ছিল, তবুও এটি ইতিমধ্যেই প্রায় সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতি এবং পাকিস্তানের পশ্চাৎপদতার মূল কারণ হলো- গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গড়ে ৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে  দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি জনসংখ্যার  বৃদ্ধিও পাকিস্তানের একটি সমস্যা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের জনসংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় ১০ মিলিয়ন কম থাকলেও এখন তা প্রায় ৪০ মিলিয়ন বেশি। এই সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ যেখানে পাকিস্তানের ২.১ শতাংশ, যা প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে দেশের সামাজিক অবস্থার কারণে পাকিস্তান পিছিয়ে যাচ্ছে। দেশের সম্পত্তি অল্পসংখ্যক লোকের হাতে কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া দেশে নারীদের অধিকার নেই বললেই চলে। লিঙ্গ সমতা সূচকে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম, যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৩তম; এটি আরও নিচে নামছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। এখনো সেখানে অনার কিলিং চলছে।

কয়েক বছর আগে প্রাক্তন ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানে ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি সুইডিশ মডেলে দেশ পরিচালনা করবেন। পাঁচ বছরে পাকিস্তানকে সুইডেনে রূপান্তরের স্বপ্নও দেখেছিলেন তিনি। ফলে সারা পাকিস্তানে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। এই সময়েই উন্নয়ন কর্মী জয়ঘাম খানের লেখা একটি কলাম প্রকাশিত হয়। ‘বাংলাদেশ মডেল’ শিরোনামের ওই নিবন্ধে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল যে পাকিস্তানকে সুইডেনে রূপান্তরিত না করে বাংলাদেশকে অনুসরণ করা উচিত। জয়ঘাম খানের প্রস্তাবের সমর্থনে একের পর এক বিবৃতি আসতে থাকে। সেই সময়ে মিডিয়ায় একাধিক কলাম প্রকাশিত হতে থাকে। টেলিভিশনে দেখা যায় একাধিক টকশো। এমনই একটি টকশো-এর  ক্লিপিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে জয়ঘাম খানকে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, অন্য কোনো দেশ নয়, পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশকে অনুকরণ করা।  যা করতে পাকিস্তানের ১০ বছর সময় লাগবে। ততদিন বাংলাদেশ উন্নয়নের দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দেশটিকে এখন রোল মডেল ভাবছে পাকিস্তানের মানুষ। বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে তা বোঝাতে এই তথ্যই যথেষ্ট।

প্রথম পাতা ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার | সর্বশেষ আপডেট: ৫:২০ অপরাহ্

 মানব জমিন

Endless gratified thanks for reading / watching /listening

No comments:

Post a Comment

Please validate CAPTCHA