বিচারাধীন জমি আবারও ‘দখলচেষ্টা’ মারধর ও বাড়িঘর ভাংচুরের অভিযোগ
সিলেট নগরীর শিবগঞ্জে মালিকানা নিয়ে বিচারাধীন একটি জমি দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে। রোববার সকালে এই ঘটনা ঘটে বলে ওই জমির দখলে থাকা মণিপুরী সম্প্রদায়ের নারী এস রীনা দেবী। এ সময় হামলাকারীরা তার ছেলেকে মারধোর, বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে বলেও অভিযোগ করেন রীনা দেবী। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন বাংলাদেশ মণিপুরী মহিলা সমিতির সভানেত্রী এস. রীনা দেবী।
এর আগে ওই জমিতে বালু ফেলে দখলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান (র.) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন বলেও জানান রীনা দেবী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর সকালে বালুবাহী ১টি ট্রাক নিয়ে কয়েকজন লোক আমার মৌরসি বসতভিটা বালু ফেলতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে আমার মেয়ে অজন্তা তাদেরকে বাঁধা দিলেতারা মালাউনের বাচ্চা গালি দিয়ে বলে- আমরা আব্দুল আজিজ মাসুকের লোক। মাসুক ভাই আমরারে পাঠাইছন। এই জায়গাত বালু ফালাইয়া তোমরারে ভিটা থাকি উচ্ছেদ খরতাম। এই বলে তারা ফের বলি ফেলা শুরু করে। পরে আমার মেয়ে অজন্তা পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে এবং পুলিশ আসার খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায় এবং আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়।
সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে একই উদ্দেশ্যে স্বসস্ত্র হামলার অভিযোগ করে এস. রীনা দেবী বলেন, আসামীরা দেশীয় অস্ত্র দা, ছুরি, শাবল, হ্যামার, ড্রিল মেশিন, লোহার রড, গ্রিল কাটার মেশিন, কুড়াল, কিরিছ ইত্যাদি নিয়ে এসে গালিগালাজ করে এবং আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা বলে এক্ষুণি বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে না গেলে তারা তারা আমাদের প্রাণে মেরে ফেলবে। আসামী এজাজ তার হাতে থাকা ধারালো দা নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য আমার দিকে আসে। আমি ভয় পেয়ে দরজা বন্ধ করে দেই তখন লাথি দিয়ে আঘাত করে এবং বলতে “দরজা লাগিয়ে কতদিন থাকবে, আজই তোদেরকে খুন করে এই বাড়ির দখল নেব”। আসামী এজাজের হুকুমে অন্যান্য আসামীরা আমাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসতে থাকলে আমরা ভয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে প্রাণরক্ষা করি। তখন আসামী এজাজের হুকুমে এবং তার নেতৃতে দলবদ্ধভাবে শক্তির মহড়া প্রদর্শন ভয়ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসামী মুহিবুর রহমান মুহিব, ইকবাল হোসেন জুয়েল, মোর্শেদুল ইসলাম মুর্শেদ, ইসতাক আহমদ, বিশু এবং অন্যান্য আসামীরা কংক্রিটের পিলার, লোহার গ্রীল ভাঙ্গা শুরু করে এবং কিছু লোক লোহার গ্রীল, কাঠ ইত্যাদি বহন করে নিয়া যায়। আসামী এজাজ, মুহিবুর রহমান মুহিব, ইকবাল হোসেন জুয়েল, মোর্শেদুল ইসলাম মুর্শেদ, ইসতাক আহমদ, বিশু অন্য ঘরে থাকা সেলাই মেশিন, থান কাপড়, মণিপুরি শাড়ী, শাল বোনার জন্য ক্রয়কৃত তাঁত মেশিন নিয়ে যায় এবয় প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এজাজ-চক্রের মূলহুতা বালাগঞ্জের খাঁপুরের আব্দুল আজিজ মাসুক নানাভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে আপোষে নিষ্পত্তিক্রমে স্বত্ব মোকদ্দমাটি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। নানাভাবে ভয় ও জোর জবরদস্তি করছেন এ মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয়বারের মতো গত ২৬ সেপ্টেম্বর আব্দুল আজিজ মাসুকের লোক এজাজ এসে জোর জবরদস্তি করেন মোকদ্দমাটি আপোষে নিষ্পত্তিক্রমে স্বত্ব মোকদ্দমাটি প্রত্যাহারের জন্য এবং তা না করলে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে হুশিয়ারী দিয়ে যান। আমরা বারবার তাদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তারা দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
এ ঘটনায় তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এস রীনা দেবী। তিনি বলেন, গত ১ নভেম্বর মঙ্গলবার আমার ছেলে অভিরূপ তার দুই সন্তানকে স্কুল থেকে বাড়িয়ে নিয়ে আসার পথে টিলাগড়স্থ কল্যাণপুর এলাকার বাসীন্দা মাদক ব্যবসায়ী, কুখ্যাত ‘কবির ডাকাত’ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আইনী প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া প্রত্যয় ব্যক্ত করেন রীনা দেবী এবং আদালতে হেরে গেলে নিরবে জমির উপর দখল ত্যাগ করবেন বলে জানান। সে সময় পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নিজের ও পরিবার সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য উদ্যেগ নিতে অনুরোধ জানান। বিজ্ঞপ্তি
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA