সিলেটে বিচারাধীন জমি ‘ফের দখলচেষ্টা, বাড়িঘরে হামলা’
হামলাকারীরা ওই জমিতে একটি টিনের ঘর বসিয়ে গেছে; বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করেছে বলেও অভিযোগকারীর ভাষ্য।
সিলেট নগরীর শিবগঞ্জে মালিকানা নিয়ে বিচারাধীন একটি জমি দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে।
রোববার সকালে এই ঘটনা ঘটে বলে ওই জমির দখলে থাকা মনিপুরী সম্প্রদায়ের নারী এস রীনা দেবী।
এ সময় হামলাকারীরা তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে বলেও রীনা দেবীর অভিযোগ।
এর আগে ওই জমিতে বালু ফেলে দখলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান (র.) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন রীনা দেবী।
এ ব্যাপারে শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য বলেন, জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে ওই পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রীনা দেবীর অভিযোগ, রোববার সকাল ৬টায় মূল মামলার বিবাদী আব্দুল আজিজ মাসুকের ভাই এজাজ আহমদসহ শতাধিক লোক তাদের জমি দখলের চেষ্টা করেন। তখন বাধা দিলে তারা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে দ্রুত পুলিশ আসায় তারা চলে যায়।
তারা যাওয়ার ওই জায়গায় একটি টিনের ঘর বসিয়ে গেছেন বলে রীনা দেবীর অভিযোগ।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করবেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “হামলার সময় দখলদারদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। তারা আমাদের বাসার গ্রিল ভেঙে দিয়েছে। এ ছাড়া বাসার ভেতরে থাকা গাছ, দেওয়ালের ইট নষ্ট করেছে।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মমিলার বিবাদী আব্দুল আজিজ মাসুকের ভাই এজাজ আহমদ।
তিনি বলেন, “আমার ভাই মাসুক প্রবাসী। তিনি আমাকে জমিটি দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি এই মামলার সিলেটের একটি আদালতে রায়ও পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই জমির হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল ও বিদ্যুৎ বিল আমরা পরিশোধ করে আসছি। রীনা দেবীর পরিবার ‘অবৈধভাবে’ জমিটি দখল করে আসছেন।”
এস রীনা দেবীর মেয়ে অজন্তা দেবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিবগঞ্জ বাজারের মকবুল টাওয়ার ও কিচেন মার্কেটের বিপরীতে আদিত্যপাড়া আলপনা-১৪ ঠিকানায় থাকা তাদের পৈত্রিক ৪৪ শতক ভূমি নিয়ে করা মামলাটি বর্তমানে আপিলে রয়েছে।
গত ৯ ডিসেম্বর সিলেট মহানগরের শাহপরান (র.) থানায় দেওয়া ডায়েরিতে এস রীনা দেবী দাবি করেন, এটি তাদের মৌরসী বা পারিবারিক উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ভূমি। এর মালিক ছিলেন তার স্বামী অমৃত সিংহ; যিনি ১৯৯৯ সালে মারা যান। অমৃতের মা তারামণি দেবী মারা যান ২০০৩ সালে। এরপর থেকে রীনা দেবী ও সন্তানরা ভূমি ভোগদখল করছিলেন।
রীনা দেবীর অভিযোগ, বিবাদীরা ১৯৮৮ সালে বিনিময় দলিল সৃষ্টি করে জায়গাটির মালিকানা দাবি করেন। এই দলিল বাতিলের জন্য এবং জমি ফিরে পেতে ২০০৮ সালে তিনি মামলা করেন। মামলাটি এখন আপিলে রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এই অবস্থায় গত ৮ ডিসেম্বর বিবাদীর সাত থেকে আটজন লোক ট্রাক ভর্তি বালু নিয়ে জায়গাটি দখলের চেষ্টা করেন। তখন অজন্তা দেবী তাতে বাধা দেন। বিবাদীর লোকজন তখন অজন্তাকে গালিগালাজ করে এবং জায়গা ছেড়ে দিতে বলে নাহলে ‘খবর আছে’ বলে হুমকি দেয়। অজন্তা দেবী পুলিশকে ঘটনাটি জানারে বিবাদীর লোকজন ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়।
আব্দুল আজিজ মাসুক বালাগঞ্জ উপজেলার খাঁপুর এলাকার মনোহর আলী তেরা মিয়ার ছেলে। তিনি প্রবাসী।
মাসুক তার বোন জাহেদার কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছেন বলে দাবি করেন।
রীনার মামলায় জাহেদা পাঁচ নম্বর বিবাদী।
শাহপরাণ থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শিবগঞ্জ এলাকায় বালু ফেলা নিয়ে উভয় পক্ষ থানায় জিডি করেছেন; তদন্ত চলছে। ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA