১৮৭৭ সালে প্রণীত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৫৭ টি ধারা সম্বলিত একটি
দেওয়ানী প্রকৃতির মূল আইন বা Substantive law। তবে, বর্তমানে এর ৫১ টি ধারা
ক...
Summary of the Specific Relief Act
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের আদ্যোপান্ত
সুনির্দিষ্ট
প্রতিকার আইনের বিধান অনুযায়ী বাদী যে সকল প্রতিকার চাইতে পারেন তাকেই
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলা হয়। আদালত যদি বাদীর প্রার্থীত প্রতিকারটি মঞ্জুর
করেন তবে বলা হয় যে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা হয়েছে।
পক্ষান্তরে, আদালত যদি বাদীর প্রার্থীত প্রতিকারটি মঞ্জুর না করে অন্যরকম
প্রতিকার (আর্থিক ক্ষতিপূরণ) দেয়, তখন বলা হয় যে, সুনির্দিষ্ট
প্রতিকারটিকে না-মঞ্জুর করা হয়েছে বা কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়া
হয়নি।
তবে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা
কিংবা না-মঞ্জুর করা আদালতের (Discretionary Power) বা সুবিবেচনামূলক
ক্ষমতা। আর আদালতকে এই ক্ষমতা আইনটির ২২ ধারায় প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদানে আদালতকে আইন দ্বারা বাধ্য করার কোন সুযোগ
নাই। পরিপরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে
আদালতের এই সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা অবশ্যই স্বেচ্ছাচারিতামূলক হবে না; বরং
এটি ন্যায়বিচারের পক্ষে সহায়ক হবে। অর্থাৎ আদালত কর্তৃক সুবিবেচনামূলক
ক্ষমতাকে অপব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭
এর অধীনে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারগুলি নিম্নরূপঃ
- ৮-১১ ধারাঃ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার।
- ১২-৩০ ধারাঃ চুক্তি কার্যকর।
- ৩১-৩৪ ধারাঃ দলিল সংশোধন।
- ৩৫-৩৮ ধারাঃ চুক্তি রদ বা বাতিল।
- ৩৯-৪১ ধারাঃ দলিল বাতিল।
- ৪২ ও ৪৩ ধারাঃ ঘোষণামূলক মোকদ্দমা।
- ৪৪ ধারাঃ রিসিভার নিয়োগ।
- ৪৫-৫১ ধারাঃ বাতিল করা হয়েছে।
- ৫২-৫৭ ধারাঃ নিষেধাজ্ঞা।
৫ ধারাতে বলা হয়েছে যে, উপরোক্ত প্রতিকারসমূহ ৫ পদ্ধতি দেওয়া যায়।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার [৮-১১]
সুনির্দিষ্ট
স্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ৮ ধারার সহিত ৪২ ধারা (দখল ও
মালিকানার ঘোষণা) সংযুক্ত করে মোকদ্দমা করতে হয়। তবে, ৮ ধারার মোকদ্দমার
বৈশিষ্ট্য নিম্নরুপঃ
- স্বত্বাধিকারীকে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।
- মালিকানা বা স্বত্ব প্রমাণ করতে হবে।
- ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।
- রায় বা ডিক্রীর বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।
- সম্পত্তির মূল্যমানের উপর ২% হারে Ad valorem প্রদান করতে হবে। মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি সর্বোচ্চ চল্লিশ হাজার টাকা হতে পারে।
- এই ধারানুসারে সরকারের বিরুদ্ধে মোকাদ্দমা দায়ের করা যায়।
অন্যদিকে,
৯ ধারানুসারে একজন দখলচ্যূত ব্যক্তি দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা করতে
পারেন। এই ধারায় মোকদ্দমার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরুপঃ
- দখলচ্যূত ব্যক্তি বা তার মাধ্যমে দাবিদার ব্যক্তিকে মোকাদ্দমা দায়ের করতে হবে।
- বাদীকে প্রমাণ করতে হবে সম্পত্তি বেআইনীভাবে বা সম্মতি ব্যতিরেকে বেদখল হয়েছে।
- দখলচ্যূত ব্যক্তিকে দখলচ্যূতির ৬ মাসেরর মধ্যে মোকাদ্দমা দায়ের করতে হবে।
- এই মোকদ্দমার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন প্রতিকারের সুযোগ আছে।
- ৯ ধারার মামলার Ad valorem বা কোর্ট ফি ৮ ধারার অর্ধেক (Half of Ad valorem)।
- এই ধারানুযায়ী সরকারের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না।
অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুরুদ্ধার সম্পর্কে ১০ ও ১১ ধারাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চুক্তি কার্যকর [১২-৩০]
আদালত
যদি পক্ষগণকে তাদের চুক্তিবদ্ধ কাজ দায়িত্ব ও কর্তব্য মেনে সম্পাদনের
আদেশ দেন, তবে এটিকে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যকারিতা বলা হয়। ১২ ধারাতে
উল্লেখ করা হয়েছে যে, চার অবস্থায় চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায়।
অন্যদিকে, ১২ ধারার বিপরীতে ২১ ধারাতে বলা হয়েছে যে, আটটি ক্ষেত্রে চুক্তি
সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।
এছাড়া, ১৩
ধারাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চুক্তি সম্পাদনের সময় চুক্তির বিষয়বস্তু
সম্পূর্ণরুপে উপস্থিত থাকলেও চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে চুক্তির বিষয়বস্তু
আংশিকভাবে বিলুপ্ত হলেও চুক্তি সম্পাদন করা যায়। ১৪, ১৫ এবং ১৬ ধারায়
আংশিক চুক্তি কার্যকর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ১৮ ধারা ত্রুটিযুক্ত
মালিকানা বা মালিকানাধীন বিক্রেতার বিরুদ্ধে ক্রেতার অধিকার। ১৯ ধারা
মোতাবেক আদালত একই সময়ে চুক্তি কার্যকর ও ক্ষতিপূরণ আদেশ দিতে পারেন। ২০
ধারা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সম্মতি সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনকে বাধাগ্রস্থ করতে
পারে না।
২৯ ধারায় মামলা খারিজের পরে ক্ষতিপূরণ
মামলা দায়েরের প্রতিবন্ধকতা বিধান আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ চুক্তির
সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে, বাদী চুক্তি লঙ্ঘনের
জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য নতুন মামলা করতে পারবেন না।
দলিল সংশোধন [৩১-৩৪]
৩১
ধারানুসারে কোন চুক্তি বা লিখিত দলিল যদি প্রতারণা বা পারস্পারিক ভূলের
দরুন সম্পাদিত হয়, তবে ঐ লিখিত চুক্তি বা দলিলের যে কোন পক্ষ বা তাদের
প্রতিনিধি এটিকে সংশোধন করার জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। আর ৩৪
ধারানুযায়ী, কোন লিখিত চুক্তি সংশোধনের পরে তা সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা
যায়।
চুক্তি রদ বা বাতিল [৩৫-৩৮]
আদালত ৩৫ ধারা বলে যে সব ক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল করতে পারেন তা নিম্নরুপঃ
- যদি চুক্তিটি বাদী কর্তৃক বাতিলযোগ্য হয়;
- যদি চুক্তিটি অবৈধ হয় এবং বাদীর চাইতে বিবাদী অধিক দোষী;
- যদি বিক্রয় বা ইজারা চুক্তির কার্য সম্পাদনের রায় বা ডিক্রী প্রাপ্তির পরেও ক্রেতা বা ইজারা গ্রহীতা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
এছাড়া, লিখিত চুক্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি মামলা দায়ের করবে।
দলিল বাতিল [৩৯-৪১]
৩৯
ধারানুযায়ী মিথ্যা, জালিয়াতি বা প্রতারণামূলকভাবে প্রস্তুতকৃত দলিল বাতিল
বা প্রত্যাহারের জন্য মামলা করা যায়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি এই জাতীয়
দলিলের গুরুতর আশাংকা করে, তবে উক্ত দলিল বাতিলযোগ্য ঘোষণা চেয়ে মামলা
দায়ের করতে পারে।
যদি আদালত কোন নিবন্ধিত দলিল
বাতিল ঘোষণা করে, তবে ডিক্রীর অনুলিপিটি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ
করবে। এছাড়া ৪০ ধারা মোতাবেক, দলিল আংশিকভাবে বাতিল করা যায়।
ঘোষণামূলক মোকদ্দমা [৪২-৪৩]
৪২
ধারানুসারে, আইনগত পরিচয় বা সম্পত্তিতে স্বত্ব আছে এমন কোন ব্যক্তি তাদের
বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে যারা তার আইনগত পরিচয় বা অধিকারকে অস্বীকার করে।
ঘোষণামূলক মোকদ্দমা মূলতঃ দুটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যথাঃ
- আইনগত পরিচয় অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে; ও
- সম্পত্তিতে মালিকানা স্বত্ব অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে।
রিসিভার নিয়োগ [৪৪]
৪৪
ধারানুযায়ী আদালত তার সুবিবেচনাক্রমে বিচারাধীন মোকাদ্দমার বিষয়-বস্তু
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন। তবে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার
আইনের ৪৪ ধারাতে রিসিভার নিয়োগের বিধান থাকলেও মূলতঃ রিসিভার নিয়োগ,
দায়-দায়িত্ব, ও অধিকার দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৪০ আদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হয়।
নিষেধাজ্ঞা [৫২-৫৭]
নিষেধাজ্ঞা
হলো কোন কাজ করার জন্য বা কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আদালতের
নির্দেশ। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৩ প্রকারের নিষেধাজ্ঞার বিধান আছে।
যথাঃ
- অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা Temporary injunction (ধারা-৫৩);
- চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা Perpetual injunction (ধারা-৫৩); ও
- বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা বা Mandatory injunction (ধারা-৫৫)।
অস্থায়ী
ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দ্বারা কোন কার্য সম্পাদন করা হতে বিরত থাকার
নির্দেশ দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে, বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা দ্বারা কোন কার্য
করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা একটি সুনির্দিষ্ট সময় অবধি বা
আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকে। কিন্তু চিরস্থায়ী
নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিবাদীকে চিরস্থায়ীভাবে কোন কার্য সম্পাদন হতে বিরত
থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
৫৪ ধারাতে ৫ টি
ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে যখন চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয়।
অন্যদিকে, ৫৬ ধারাতে ১১ টি এমন ক্ষেত্রে কথা উল্লেখ আছে যখন নিষেধাজ্ঞা
মঞ্জুর করা হয় না।
সর্বোপরি, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
সম্পর্কিত বিধান সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারাতে উল্লেখ থাকলেও
মূলতঃ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ আদেশ দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া অস্থায়ী ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কিছু পার্থক্য
রয়েছে। তা নিম্নরুপঃ
- মামলার
যে কোন পর্যায়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা যেতে পারে। কিন্তু মামলার
চুড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
- দরখস্তের
মাধ্যমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় এবং আদালত ‘আদেশ’ এর মাধ্যমে
সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। অপরদিকে,আরজির মাধ্যমে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া
হয় এবং আদালত ডিক্রীর মাধ্যমে সিদ্ধান প্রদান করেন।
- অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হলো একটি আদেশ। পক্ষান্তরে, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হলো একটি ডিক্রী।
- অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্যের সাজা ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত হতে পারে।
আবার ৫৭ ধারা অনুযায়ী কোন চুক্তির হা-বোধক কার্য সম্পাদন না হলে, না-বোধকভাবে কার্যকর করা যায়।
Mohammad Misbah Uddin is the author of
Moneygelt, covering geek law and legal issues. A qualified Barrister
from London, England. Follow him on Facebook: Barrister Misbah Uddin
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA