নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল: গঠন ও এখতিয়ার
নারী ও
শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ২৬ ধারার বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, উক্ত আইনের
অধীনে অপরাধ বিচার করার জন্য বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করে
ট্রাইব্যুনাল থাকবে। আর এই ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনাল নামে পরিচিত হবে। উল্লেখ্য, সরকার প্রয়োজন বোধ করলে চাইলে এক
জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করতে পারবেন।
উক্ত ট্রাইব্যুনাল একজন বিচারকের সমন্বয়ে
গঠিত হবে এবং এই ট্রাইব্যুনালের বিচারকের জন্য সরকার জেলা ও দায়রা জজগণদের
মধ্য হতে নিযুক্ত করতে পারেন। প্রয়োজনে সরকার চাইলে কোন জেলা ও দায়রা জজকে
ওনার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করতে
পারেন। উল্লেখ্য, এখানে জেলা জজ বলতে অতিরিক্ত জেলা জজ এবং দায়রা জজ বলতে
অতিরিক্ত দায়রা জজও বুঝাবে। অর্থাৎ, সরকার চাইলে প্রয়োজনবোধে অতিরিক্ত জেলা
জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজকেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের
বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করতে পারেন।
সাব- ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন
কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা সরকারের নিকট হতে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা
ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির লিখিত রিপোর্ট ব্যতীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনাল কোন অপরাধের বিচারার্থ গ্রহণ করবেন না।
কিন্তু আপনি যদি, সাব- ইন্সপেক্টর
পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা সরকারের নিকট হতে সাধারণ
বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির নিকট এই আইনের অধীন কোন
অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করে ব্যর্থ হন, তবে এই যে ব্যর্থ
হয়েছেন সেই মর্মে হলফনামা সহ ট্রাইব্যুনালের নিকট অভিযোগ দাখিল করলে
ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে অর্থাৎ আপনাকে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে
অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোন ব্যক্তিকে
নির্দেশ প্রদান করবেন এবং অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যক্তির
অভিযোগটি অনুসন্ধানের করে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের নিকট রিপোর্ট
প্রদান করবেন। কিন্তু যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে অর্থাৎ আপনাকে
পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট না হয় তবে অভিযোগটি সরাসরি নাকচ করবেন। আবার 29 DLR
369 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, ট্রাইব্যুনাল নিজ ইচ্ছায় বা কোন দরখাস্তের
ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
এখন কথা হচ্ছে, অনেকেই অনেক সময়
দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন যে, আমি ভিকটিম আছি এক জেলায় আর অপরাধী রয়েছে আরেক
জেলায়, তখন মামলাটা কোন জায়গায় করা হবে? – দেখা যায় যে, এই আইনের অধীনে
বেশিরভাগ মামলাই করা হয় স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে। ধর্ষণ
ব্যতীত বাকী সব গুলো অপরাধই যেহেতু অনেকটাই স্বামী স্ত্রী বা সংসারের
মধ্যকার ব্যাপার, সেহেতু ধর্ষণের মামলা এই আইন থেকে বাদ দিয়ে যদি দণ্ডবিধির
অধীনে মামলা করা হতো, তবে এই আইনের নাম স্ত্রী নির্যাতন দমন আইন হলেই
নামকরণে স্বার্থকতা উদ্ধার হতো। যাই হোক, যেহেতু সকল বিবাহ নিজ জেলার মধ্যে
সম্পন্ন হয় না, ভিন্ন ভিন্ন জেলার মধ্যেও সংগঠিত হচ্ছে আবার একই জেলার
ছেলে মেয়ের মধ্যে বিবাহ হলেও কর্মের খাতিরে ভিন্ন জেলায় থাকতেই পারে; কথা
হচ্ছে তখন ভিকটিম কোথায় মামলা করবে, নিজ জেলায় নাকি আসামী যে জেলায় আছে সেই
জেলায়? আবার অনেক ভিকটিম স্ত্রীর মনে প্রশ্ন উঠে যে, কোন জেলায় মামলা করলে
স্বামী আর তার মা বাবা ভাই বোনকে তাড়াতাড়ি জেলে ঢুকানো যাবে। এই ধরনের
প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ২৭(২)
বলা হয়েছে যে, যে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন এলাকায় কোন অপরাধ বা অপরাধের
অংশবিশেষ বা যেখানে অপরাধীকে বা একাধিক অপরাধীর ক্ষেত্রে যেকোনো একজনকে
পাওয়া যাবে, সেই স্থান যে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন, সেই ট্রাইব্যুনালে
অপরাধটি বিচারার্থ গ্রহণের জন্য রিপোর্ট বা অভিযোগ পেশ করা যাবে এবং সেই
ট্রাইব্যুনালে অপরাধটি বিচার করা হবে। অর্থাৎ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
আইন ২০০০ অধীনে কোন অপরাধ বা একটা অপরাধের অংশবিশেষ যে স্থানে সংগঠিত হবে,
সেই স্থানটি যে ট্রাইব্যুনালের অন্তর্ভুক্ত, মামলা সেই ট্রাইব্যুনালে করতে
হবে। আবার, আসামীকে যেখানে পাওয়া যাবে (একাধিক আসামীর ক্ষেত্রে যেখানে
অন্তত একজনকেও পাওয়া যাবে), সেখানে যে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার, সেই
ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে।
বিষয়টা আরও সহজতর করে বলতে গেলে বলতে হবে,
যেহেতু প্রতিটি জেলা সদরে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
রয়েছে, সেহেতু যে জেলায় অপরাধ অপরাধের অংশবিশেষ যে স্থানে সংগঠিত হবে,
মামলা সেই জেলায় করতে হবে। আবার একইভাবে আসামীকে যে জেলায় পাওয়া যাবে
(একাধিক আসামীর ক্ষেত্রে যেখানে অন্তত একজনকেও পাওয়া যাবে), মামলা সেই
জেলায় করা যাবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আসামী যে অঞ্চলে অবস্থান করছে বা
আসামী কর্তৃক যে অঞ্চলে নির্যাতন সম্পন্ন হয়েছে, মামলা সেই অঞ্চলে করাটাই
সমীচীন। এরপর আর নিশ্চয়ই মামলা কোন কোর্টে করতে হবে, এই নিয়ে কোন
দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করবে না।
তবে একটি ব্যতিক্রমধর্মী এবং মজাদার বিষয়
হচ্ছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অধীনে কোন অপরাধের সাথে যদি অন্য
কোন অপরাধও সংগঠিত হয়ে থাকে, তবে ন্যায় বিচারের স্বার্থে উভয় অপরাধের
বিচারকার্য একই সঙ্গে বা একই ট্রাইব্যুনালে পরিচালনা করা সম্ভব।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের
আদেশ, রায় বা আরোপিত দণ্ডে যদি আপনি অসন্তুষ্ট/সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন, তবে
উক্ত আদেশ, রায় বা আরোপিত দণ্ড প্রদানের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম
কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারবেন।
Endless gratified thanks for reading / watching /listening
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA