পার্টনারশিপ বা অংশীদারি ব্যবসার আদ্যোপান্ত : পর্ব ৩
আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, একটি অংশীদারি কারবার অন্তত ২ জন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জনকে নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। ২ জন বা ২০ জন বা এর মধ্যে যেকোনো সংখ্যার লোক দিয়ে কোন অংশীদারি কারবার গঠিত হওয়ার পর যদি,
- কোন অংশীদার মৃত্যুবরণ করে বা
- অবসর গ্রহণ করে বা
- নতুন কোন অংশীদার গ্রহণ করাতে চাইলে বা
- অংশীদার দেউলিয়া ঘোষিত হলে বা
- অংশীদার কেউ বহিষ্কার হলে,
তবে, অংশীদারি কারবারের অস্তিত্ব বজায় রেখে পুনঃবিন্যাস করা যাবে; আর এর পুরো প্রক্রিয়াকেই বলা হয় পুনঃগঠন। তবে, পুনঃগঠন সম্বন্ধে অনেকেই আবার ব্যবসার ধরন বা প্রকৃতির পরিবর্তন ভেবে ভুল ভাবতে পারেন। অংশীদারি কারবারের পুনঃগঠন বলতে আসলে কেবলমাত্র অংশীদারদের দায় দায়িত্ব ও অধিকারের পরিবর্তন করাকে বুঝাবে; কেননা পুনঃগঠন মানে কিন্তু অস্তিত্বের পরিসমাপ্তি নয়।
উপরিউক্ত যে ৫ কারণে সাধারণত একটি অংশীদারি কারবারের পুনঃগঠনের প্রয়োজন সেই ৫ টি কারণ সম্বন্ধে বিস্তারিত নিম্নরূপ:
কোন অংশীদারের মৃত্যু হলে: সাধারণত কোন অংশীদারি কারবারে একজন অংশীদার মৃত্যুবরণ করলে, সেই অংশীদারি কারবার সেখানেই তাদের কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করে, কেননা চুক্তিতেই সেই রকম করে বর্ণিত থাকে। যদিও চুক্তিতে যদি এই ধরনের কোন ক্লজ বা শর্ত না থাকে যে, কোন অংশীদারের মৃত্যুতে অংশীদারি কারবার বিলুপ্ত হবে না, তাহলে কোন অংশীদার মারা গেলে অংশীদারি কারবার বিলুপ্ত করা যাবে না। পার্টনারশিপ আইনের ৩৫ ধারা অনুসারে, কোন অংশীদারের মৃত্যুতে অংশীদারি কারবারের বিলুপ্তি ঘটবে না, যদি এই মর্মে ঘোষণা থাকে তাহলে অংশীদাররা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে, শর্ত একটাই কোন অংশীদারের মৃত্যুর পর মৃত অংশীদার বা তার সম্পত্তিকে কোন পদক্ষেপের জন্য দায়ী করা যাবে না। কেননা, পার্টনারশিপ আইনের ৩৫ ধারার উল্লেখ্য যে, কোন অংশীদারের মৃত্যুর পর কারবারের যাবতীয় কার্যক্রম ও ধার দেনার জন্য মৃত্যু ব্যক্তির সম্পত্তি দায়বদ্ধ হবে না। আবার, ৩৭ ধারায় বলা আছে যে, মৃত অংশীদারের প্রাপ্য পরিশোধ করা না হলে, যতদিন পর্যন্ত কারবারে ঐ প্রাপ্য সম্পদ ব্যবহৃত হবে ততদিন তার উত্তরাধিকারদেরকে ৬% হারে মুনাফা দিতে হবে।
অংশীদারদের কেউ অবসর গ্রহণ করলে: পার্টনারশিপ আইনের ৩২(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, একজন অংশীদার নিম্নলিখিত যে কোন উপায়ে কারবার হতে অবসর গ্রহণ করতে পারে:
- পার্টনারশিপ ব্যবসায় যেকোনো একজন পার্টনার সকল পার্টনারদের মধ্যে পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে অবসর গ্রহণ করতে পারবে;
- পার্টনারশিপ ব্যবসা যে চুক্তির ভিত্তিতে সংগঠিত, সেই চুক্তিতে যদি স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ থাকে, তাহলে সহজেই অবসর গ্রহণ করতে পারবে,
- Banwarilal vs Roop Kishore (1954) All 520 মামলার রায় অনুসারে, কোন পার্টনার যদি অংশীদারি ব্যবসা থেকে অবসর গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে, তাহলে সে বাকি সকল অংশীদারদেরকে লিখিতভাবে জানিয়ে অবসর গ্রহণ করতে পারবে।
অবসর গ্রহণের পরও অবসর গ্রহণকারী পার্টনার পূর্বের সকল কাজকর্ম ও দেনার জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। অবসর গ্রহণের পরের কোন কার্যের জন্য যাতে অবসর গ্রহণকারী পার্টনারকে দায়বদ্ধ করা না যায়, সেজন্য অবশ্যই সর্বসাধারণের অবগতির জন্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রচার করে দিতে হবে। অন্যথায়, কারবার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও কারবারের কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন।
নতুন অংশীদার গ্রহণ: পার্টনারশিপ আইনের ৩১ ধারা অনুসারে, অংশীদারি কারবারে নতুন কোন অংশীদারকে গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই বাকি সকল অংশীদারদের সম্মতি লাগবে। সকলের সম্মতি ব্যতীত নতুন কাউকে কারবারে অংশীদার হিসেবে ঢুকানো সম্ভব নয়। তবে, সকলের সম্মতিতে নতুন অংশীদারকে গ্রহণ করা হলে, গ্রহণকালে মূলধনের পরিমাণ এবং মুনাফার অনুপাত অবশ্যই নির্ধারণ করে নিতে হবে। নতুন অংশীদার গ্রহণ করার আগেকার কোন কার্যক্রমের জন্য নতুন অংশীদারকে দায়ী করা যাবে না। অংশগ্রহণের পরবর্তী কার্যক্রমের জন্যই কেবল নতুন অংশীদারকে দায়ী করা যাবে।
অংশীদার কেউ দেউলিয়া ঘোষিত হলে: পার্টনারশিপ আইন ১৯৩২ এর ৩৪(১) ধারা অনুসারে, কোন অংশীদার আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে, ঘোষণার তারিখ থেকে দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তির সাথে অংশীদারি কারবার বা পার্টনারশিপের সাথে সম্পর্ক বিলুপ্ত হবে। অতএব, যে কয়জন অংশীদার মিলে একটি অংশীদারি কারবার শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে যেকোনো একজন বা একাধিক জনও যদি আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়, তবে দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার দিন থেকে দেউলিয়া ব্যক্তির সাথে অংশীদারি কারবারের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, আর তখনি পার্টনারশিপ ডিড বা অংশীদারির চুক্তিপত্র সংশোধন/পরিবর্তন করত: অংশীদারি কারবারকে পুনঃগঠন করতে হবে।
অংশীদারের বহিষ্কার: অংশীদারি চুক্তিতে যদি উল্লেখ থাকে যে, অংশীদারদের মাঝে কাউকে বহিষ্কার করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে বহিষ্কার করতে হবে, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো অংশীদারকে বহিষ্কার করা সম্ভব। কিন্তু, পার্টনারশিপ ডিডে যদি এমনটা উল্লেখ না থাকে তাহলে কোন মতেই শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে কোন অংশীদারকে বহিষ্কার করা সম্ভব নয়। অংশীদারি চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে ৩ শর্তে একজন অংশীদারকে বহিষ্কার করা যাবে। শর্তসমূহ:
- অংশীদার চুক্তিতে বহিষ্কারের বিধান ও শর্তাবলি উল্লেখ থাকলে এবং তা যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে,
- অংশীদারের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সরল বিশ্বাসে সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশীদার কর্তৃক গ্রহণ হতে হবে,
- Charmi Chaed Vs Evan’s (1904) I. ch. 466 মামলার রায় অনুসারে, বহিষ্কার কৃত অংশীদারকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো জানাতে হবে এবং আনিত অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সময় ও সুযোগ প্রদান করতে হবে।
দিন শেষে কোন অংশীদার যদি বহিষ্কার হয়ে যায়, তবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটা জনসাধারণকে জানাতে হবে। কেননা, কোন বহিষ্কৃত অংশীদারকে অংশীদার ভেবে তৃতীয় ব্যক্তি কোন চুক্তি বা লেনদেন করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা না হলে, তৃতীয় কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বহিষ্কৃত অংশীদারের ন্যায় বাকি অংশীদাররাও দায়গ্রস্ত থাকবে।
Endless gratified thanks for reading / watching /listening
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA