ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে কিন্তু শ্রমঘণ্টার আয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ - Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Latest

Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Mission: We champion human dignity, justice, and equality. Civic Vision: protect rights, fight injustice, and promote people-centred democracy. Vision: We envision a world with equal access to quality education for every child. Our initiative, "One World, One Identity, One Curriculum," embodies this fair, united future. Protecting Minorities: We are campaigning for a robust protection system for minority communities in Bangladesh, guaranteeing their safety, security, and equal citizenship.

Friday, September 24, 2021

ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে কিন্তু শ্রমঘণ্টার আয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

করোনাকাল তবিবুর রহমানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। ফ্রিল্যান্সার তবিবুর বলেন, ‘আমি বড় কিছু কাজ পেয়েছি এই সময়ে। অন্য সময়ে হলে সম্ভব হতো কি না জানি না। আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাফিকস টিমকে লিড দিই। প্রজেক্ট চলাকালীন মাসে সাত হাজার ডলার করে দিয়েছিল ওরা।’

দশজনের একটি দল নিয়ে যশোরে কাজ করেন তবিবুর। করোনায় অনেকের কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ হলেও তাঁর মতো ফ্রিল্যান্সারদের অনেকে এ সময় ভালো করেছেন। দেশে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে পেওনিয়রের পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করেন সাত হাজার ফ্রিল্যান্সার। ব্যাংকটির সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে এই কার্ডের মাধ্যমে ৩৩ হাজার ডলার, ১৯–২০ বছরে সালে ৭৩ হাজার এবং ২০–২১ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ডলার এনেছেন ফ্রিল্যান্সাররা। এ ছাড়া এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষ ও চলতি যেসব খাত রয়েছে, সেসব খাতে করোনায় কাজ ও আয় বেড়েছে।  স্বাস্থ্য খাত, ই–কমার্স, গেম ডেভেলপিংসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অনেক কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আবার পর্যটন খাতের মতো কিছু খাতে কাজ কমেছে।

মাহমুদুর রহমান গেম, ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ তৈরির কাজ করেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে মানুষ লম্বা সময় বাসায় কাটিয়েছে। গেমের প্রতিও ঝুঁকেছে তারা। এই খাতের প্রসারও ঘটেছে। মাহমুদুর এই সময়ে প্রচুর কাজও পেয়েছেন। আরেক ফ্রিল্যান্সার সুমন সাহা জানিয়েছেন, তাঁর কাজ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে করোনার মধ্যে।

অবশ্য কেউ কেউ করোনার শুরুতে কাজ তেমন পাননি। দিনাজপুরের বেলাল সরকারের করোনার প্রথম তিন–চার মাস কাজ কমে যায়। পরে আবার বাড়ে। ই–কমার্সে বাজার বাড়তে থাকায় তাঁর কাজের পরিমাণও বাড়তে থাকে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের বর্তমান অবস্থা

কামরুল হাসানের পড়াশোনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। পড়াশোনা শেষে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন। কিন্তু ‘জব সিকিউরিটি’ নিয়ে চিন্তা ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। নিজ বাড়ি চাঁদপুরের মতলবেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ও নেই তাঁর।

কামরুলের মতো অনেকেই এখন নিয়মিত চাকরির পরোয়া না করে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। তিনি বলেন, নিয়মিত কাজ করতে পারলে বসে থাকতে হয় না।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারতের পরেই অবস্থান। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) জানিয়েছে, দেশে সক্রিয় ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখ। ২০১৭ সালে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট বলেছিল, বাংলাদেশে সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার আছে। তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানায়, অক্সফোর্ডের এই তথ্য বিশ্বের সব বড় বড় ফ্রিল্যান্সিং সাইটের হিসাব থেকে নেওয়া। এ বাইরেও সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করছেন অনেক ফ্রিল্যান্সার।

দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঠিক সংখ্যা নেই। ফ্রিল্যান্সারদের নিবন্ধিত করতে এবং নানান সুবিধা দিতে গত বছরের নভেম্বরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে সরকার ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড দেওয়া শুরু করে। এই আইডি কার্ডের সঙ্গে যুক্ত আছে বিএফডিএস। তারা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ফ্রিল্যান্সার এই কার্ড নিয়েছে। এ ছাড়া এক লাখের বেশি প্রক্রিয়াধীন।

শ্রমঘণ্টার আয়ে পিছিয়ে দেশ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রসার ঘটলেও আয়ের দিক থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। দ্য গ্লোবাল গিগ ইকোনমিকস ইনডেক্স ২০১৯ সালে ফ্রিল্যান্সারদের ক্রমবর্ধমান আয়ের দেশের একটি তালিকা দেয়। তাতে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ আছে, আট নম্বরে। বাংলাদেশের আগে আছে ফিলিপাইন, ভারত ও পাকিস্তান।

গত জুলাইয়ে জাপানের পত্রিকা নিককে এশিয়া তাদের একটি প্রতিবেদনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সূত্র দিয়ে বলেছে, অনলাইন মার্কেটে উদীয়মান দেশগুলোর শ্রমিকেরা উন্নত দেশের চেয়ে ঘণ্টাপ্রতি কম বেতনে কাজ করেন। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে রয়েছে, ঘণ্টাপ্রতি তাদের আয় ৩০ ডলারের বেশি। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকেও বাংলাদেশের আয় সেখানে ১০ ডলারের কম। ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন বাংলাদেশের চেয়ে ঘণ্টায় বেশি আয় করে।

চ্যালেঞ্জ দক্ষতার

বাংলাদেশের এই কম আয়ের বিষয়ে ফ্রিল্যান্সাররা দক্ষতার প্রসঙ্গ টানলেন। ফ্রিল্যান্সার শাহরিয়ার ইবনে আজম প্রথম আলোকে বলেন, একজন ফ্রিল্যান্সার কতটা দক্ষ, সেটার ওপর নির্ভর করবে সে কেমন আয় করতে পারবে। এ ছাড়া ভারত, পাকিস্তানের ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। ওরা অনেক কম রেটে কাজ করে। তখন বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররাও প্রতিযোগিতায় টিকতে গিয়ে কম রেটের দিকেই যায়।

যথেষ্ট দক্ষ না হয়ে কাজে নামাকে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ে মূল চ্যালেঞ্জ বলে জানালেন আফজালুর রহমান নামের একজন ফ্রিল্যান্সার। তিনি বলেন, এখন অনেক সুযোগ আবার প্রতিযোগিতাও বেশি। তাই দক্ষ না হয়ে এখানে নামা ঠিক নয়। ডেটা এন্ট্রির কাজ দিয়ে এক–দু মাস চলা যাবে, কিন্তু টিকে থাকতে হলে যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে।

বিএফডিএসের চেয়ারম্যান তানজীবা রহমান বলেন, কোনো রকম কাজ শিখেই এখন অনেকে নেমে পড়ে। পরবর্তীকালে নিজেকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার আগ্রহও থাকে না। কখনো কখনো ক্লায়েন্ট তাদের ওপর বিরক্ত হয় এবং নিষেধাজ্ঞাও দেয়। তিনি বলেন, কাজের দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা এবং ব্যবসায়িক ডিল করার দক্ষতাও ফ্রিল্যান্সিংয়ে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বছরে কত রেমিট্যান্স

ফ্রিল্যান্সারদের সঠিক সংখ্যা যেমন জানা যায়নি, তেমনি বছরে কত টাকা তাঁরা বিদেশ থেকে আনছেন, তারও পরিসংখ্যান নেই। বিএফডিএস বলছে, এ সংখ্যা ৫০০ মিলিয়নের বেশি।

পেমেন্ট পদ্ধতি নিয়েও দেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে কিছুটা হতাশা আছে। প্রায় সবাই বলছেন, বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপাল হচ্ছে একটি স্বীকৃত পেমেন্ট পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশে এত বড় শ্রমশক্তি থাকার পরেও পেপাল নেই। এ ব্যাপারে বিএফডিএসের চেয়ারম্যান তানজীবা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে পেপাল না আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের সঠিক কোনো তথ্য না পাওয়া। পেপালের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট পেপালে ভরসা করে। পেপাল দেখবে, এ দেশে আসা তার জন্য লাভজনক কি না। কারণ, টাকা এখানে আসবে। ওদেরকেও নিয়মনীতির বিষয় দেখতে হবে। কী পরিমাণে টাকা এখান থেকে যাবে, সেটাও পেপাল দেখবে।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে পেপালকে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানালেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পেপালের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং তাতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পেপাল বিষয়ে ফ্রিল্যান্সারদের ভালো সংবাদ দিতে পারবেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা করতে পারছি না। ওরা (পেপাল) হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত জানাবে।’

জুনাইদ আহমেদ বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের কার্ড ও নিবন্ধনের জন্য সাইট করা হয়েছে, যার মাধ্যমে তাদের নানান সুবিধা দেওয়া হবে। সেখানে সবাই নিবন্ধন করেনি। এটা ঐচ্ছিক, কেউ চাইলে করবে, কেউ না–ও করতে পারে। তবে বড় বড় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এবং দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তাতে দেখা যায়, সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার দেশে আছে।

ঘণ্টাপ্রতি কম আয় ও দক্ষতা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব নির্ভর করে দক্ষতা, যোগ্যতা, নেগোসিয়েশনসহ অনেক কিছুর ওপর। তবে দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রয়েছে।

দেশের ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ডটি যদি সবাই নিত, তাহলে সংখ্যার একটা ধারণ পাওয়া যেত। তিনি জানান, দেশে বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন আয় করে ফ্রিল্যান্সাররা। তাদের দক্ষতা আরেকটু বেশি হলে টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতো। এ ছাড়া অবকাঠামোগত সুবিধা দিতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত উচ্চ গতির ইন্টারনেট দিতে হবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা ও দাম কমাতে হবে।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%81-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%98%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6


 

No comments:

Post a Comment

Please validate CAPTCHA