মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন সেপ্টেম্বর ২০২১
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: প্রবলভাবে সমালোচিত হলেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি কমেনি
- মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)
ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন সেপ্টেম্বর ২০২১-এ আরো বলেছে, সেপ্টেম্বর, ২০২১ মাসে ২টি হত্যাকান্ড ও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাগুলোতে ১২টি ঘটনায় অবৈধ অনুপ্রবেশীকারীকে উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক আটক বা বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) -এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট এডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপরোক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়।
নিম্নে পাঠকদের জন্য পুরো প্রতিবেদনটি ছাপা হলো:
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২১ সময়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ও পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্র কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় এই সময়কালে ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন চিন্তা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হামলা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনাও বন্ধ হয়নি। অপরদিকে ছিনতাই ও গনপিটুনির মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভুত হত্যা, বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলি
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২১ এ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ৮টি ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন ও ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দৌছড়ির ছাগলখাইয়া এলাকার সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ অভিযানে জেএসএস সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে গুলি বিনিময় হয়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে জেএসএস সন্ত্রাসী গ্রুপের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর এলাকায় র্যাবের সাথে জঙ্গিদের গোলাগুলির পর অস্ত্রসহ ৪ জঙ্গিকে আটক করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো: শাহজাহান (২৭) ও অজ্ঞাতনামা আরো একজন (দুইজন) নিহত হয়েছেন। বিজিবি’র দাবি তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও ইয়াবা কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিঝুম দ্বীপের সিডিএসপি বাজারের কাছে জলদস্যু হাসান বাহিনীর সঙ্গে কোস্টগার্ড সদস্যদের গোলাগুলি হয়। এ সময় হাসান বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ হাসানকে অস্ত্র, গুলিসহ আটক করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে কক্সবাজারের উখিয়ায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জাহাঙ্গীর নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। র্যাবের দাবি জাহাঙ্গীর একজন মাদক কারবারি। ২৯ সেপ্টেম্বর, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের করইবুনিয়া পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে মাদক কারবারীদের গোলাগুলিতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও বিক্ষোভে দমনে বল প্রয়োগের অভিযোগ
সেপ্টেম্বর মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ১ জন, নির্যাতনে অন্য ১ জনের মৃত্যু, তাছাড়াও ১ জন ছাত্রকে বাসা থেকে তুলে আনা এবং বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখ সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাবলাতলা ঢোস এলাকা থেকে ৫ জেলে একটি ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে সাগরে রওনা দেয়। এসময় পায়রা বন্দর নৌ-পুলিশের এএসআই মামুনসহ ৪ পুলিশ সদস্য অপর একটি ট্রলার নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়ার পরে জেলেদের ট্রলার ফের বাবলাতলা ছোট ঢোসের খালে প্রবেশ করে এবং ৫ জেলের মধ্যে ৪জন পালিয়ে যায়। ট্রলারে থাকা একমাত্র জেলে মো. সুজন হাওলাদারকে (৩০) নৌ-পুলিশের সদস্যরা আটক করে। পরে তাকে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। মো. সুজন হাওলাদারের পরিবারসহ স্থানীয়দের দাবি নৌ-পুলিশের সদস্যদের নির্যাতনে সুজনের মৃত্যু হয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ যশোরে চাঁদাবাজির অভিযোগে গণপিটুনির শিকার রবিউল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তির ‘পুলিশ হেফাজতে’ মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি বাজারে গণপিটুনির শিকার রবিউলকে বিকাল ৪টা ৩৮ মিনিটে জরুরি বিভাগে আনা হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে রবিউলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনে পুলিশ।
কাঁচপুর শিল্পনগরী এলাকায় অবস্থিত পোশাক রপ্তানীকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওপেক্স গ্রুপের সিনহা গার্মেন্টসে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের বকেয়া বেতন-ভাতার দাবীতে কারখানা এলাকায় অবস্থান নেয়। দিনভর বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে মালিক পক্ষের কোনো সাড়া না পাওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর, বুধবার বিকেলে শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট সড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে খন্ড খন্ড ভাবে মিছিল বের করে। পুলিশ এসময় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পথচারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন শ্রমিক আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বকেয়া বেতন-ভাতা আগামী মাসে পরিশোধ করা হবে বলে মালিক কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। পুলিশের এ ধরণের বেআইনী বল প্রয়োগ শান্তিপূর্ণভাবে সমধান করা যেত বলে এমএসএফ মনে করে।
ই-অরেঞ্জের গ্রাহকরা টাকা ফেরত অথবা অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারির দাবিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলেন । এ সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে গ্রাহকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব থেকে মৎস্য ভবন গেলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার সময় অন্তত ১০ জন আহত হন এবং ঘটনাস্থল থেকে দুই জনকে আটক করে নিয়ে যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে ই-অরেঞ্জ গ্রাহকরা মানববন্ধন করছিলেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় ক্যাম্পের গোয়েন্দা সদস্য মো. আমির হোসেন, ৭ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কয়লার খোঁজে ফুল মিয়ার বাড়িতে যান। তখন ফুল মিয়া বাড়িতে না থাকায় স্ত্রী জহুরা বেগম দরজা খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় বিজিবির সদস্য মো. আমির হোসেন দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে জহুরা বেগমের পেটে আঘাত করে। পরে জহুরা বেগমের চিৎকারে প্রতিবেশী রহিমা বেগম (৩৫) এগিয়ে গেলে তাঁকেও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। রহিমা বেগম বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এ ঘটনায় নারী শ্রমিকের স্বামী ফুল মিয়া সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি অধিনায়ক ও পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সুনামগঞ্জের ২৮ বিজিবি অধিনায়ক ও পরিচালক তসলিম এহসান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরমান আহমেদ রেজওয়ান (২৪) কে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পেশাদার অপরাধীর মতো হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে, চোখ বেঁধে বাসা থেকে ১২-১৫ জন পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের ভাষ্য, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় শহরের বিসিক ফুলবাড়ি এলাকায় সাতমাথা-মাটিডালি সড়কে মোহাম্মদ রকি (২৭) নামের একজন আরোহীকে নিয়ে উল্টো পথে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন রেজওয়ান। বিপরীত দিক থেকে আগত একজন কনস্টেবলসহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বগুড়া কার্যালয়ে কর্মরত এসআই আহসান হাবিবের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় বাগ্বিতণ্ডার সময় আরমান উপপরিদর্শক (এসআই) ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। পরিবারের দাবি পুলিশের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ পুরোটাই সাজানো।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
সেপ্টেম্বর ২০২১ মাসে কারা হেফাজতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা (৪২) কারা হেফাজতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আগষ্টের মাঝামাঝি সময়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দিলে দেয়। ১৮ আগস্ট থেকে ঢাকা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে তিনি মিডফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজলুর রহমান তন্ময় ওরফে তাপস সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাবন্দী মো. খোরশেদ আলমের (৬০) অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার বিকেলে কারারক্ষীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারা হেফাজতে মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৫) নামে এক হাজতি মৃত্যু হয়েছে। হাজতি আশরাফুল ১২ সেপ্টেম্বর, রবিবার ভোরের দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আবুল বাশার শামীম (৪৯) নামে এক কয়েদিকে মঙ্গলবার সকাল ৭টায় অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সীমান্তে হত্যা ও অনুপ্রবেশ
সেপ্টেম্বর, ২০২১ মাসে ২টি হত্যাকান্ড ও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাগুলোতে ১২টি ঘটনায় অবৈধ অনুপ্রবেশীকারীকে উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক আটক বা বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে।
কুড়িগ্রামের রৌমারী দাঁতভাঙা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচরের আন্তর্জাতিক পিলার ১০৫৪, সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ’র গুলিতে শনিবার ভোরে শোয়েবুর রহমান (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে শোয়েবুরসহ কয়েকজনে সীমান্তে গরু চোরাচালানের উদ্দেশে যায়। এ সময় ভারতের দ্বীপচর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় শোয়েবুর রহমান।
২০ সেপ্টেম্বর, রাত সাড়ে ৮টার কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলার খেতারচর সীমান্তে মোহাম্মদ আলী (২০) নামে এক ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি ভেবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফগুলি করে হত্যা করেছে। ভারতীয় কাঁটাতারের ওপরে বাঁশের তৈরি আড়কি লাগিয়ে গরু পারাপারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে মোহাম্মদ আলী। ভারতের দ্বীবচর বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা ‘বাংলাদেশি গরু চোরাকারবারি’ ভেবে গুলি ছুড়লে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ।
অপরদিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপরাধের ৫ ঘটনায় ১১জন নারীসহ ৩৮ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের বাঘারচর সীমান্ত এলাকা থেকে রমজান আলী নামের এক ভারতীয় নাগরিককে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) আটক করেছে। তবে কী কারণে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তা জানা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনাসমূহের বন্ধে দৃশ্যমান কোন প্রকার তৎপরতা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি।
শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা
দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২১ মাসে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন; ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত মাসগুলোর মতই অব্যাহত রয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমনে ও নিয়ন্ত্রনে কার্যকর ভুমিকা লক্ষণীয় নয়। বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ও অপরাধ প্রবণতার বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে।
এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে ৩৪৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৭১টি, গণধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি, প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধষর্ণের শিকার হয়েছে ৮ জন। উল্লেখ্য যে ধর্ষণের শিকার ৭১ জনের মধ্যে ৪৫ জন শিশু ও কিশোরী, অপরদিকে গণধর্ষণ এবং ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ১১ জনই শিশু ও কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৮টি, যৌন হয়রানি ২২টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৪২টি ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে ২৩ জন শিশুকিশোরীসহ মোট ৭৩ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন, যা গত মাসের তুলনায় ১৫জন বেশী। অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছে ২ জন নারী। অপহরণের শিকার হয়েছে ৩ জন শিশু অপরদিকে ১২ জন শিশু, কিশোরী ও নারী নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়াও আগষ্ট মাসে ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৬৯ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ১৫ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
এ মাসে ধর্ষণের ২টি, এক অন্ত:সত্ত্বা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ধাপাচাপা দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান সালিশের মাধ্যমে আপোস মীমাংসা করেন। বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিশের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকার জরিমানার বিনিময়ে মিমাংসা করেন। এ মাসে ৬ জন মৃত ও ৪ জন জীবিত নবজাত শিশুকে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এ শিশুদেরকে কি কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপনের চেষ্টা করে না। এমএসএফ মনে করে, দেশে ধর্ষণ, শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানী ও নিপীড়নের ঘটনা যে হারে ঘটে চলেছে তাতে করে সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব বিশেষ করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রনে সরকারের নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার/অপব্যবহার
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নির্বিচার ব্যবহারে জনমনে নানা উদ্বেগ আর ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হলেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি কমেনি বরং ধারাবাহিকভাবে এর অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১১ জন আইনজীবী ৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এক দম্পতিসহ একজন রাজনৈতিক নেতা ও আরো ৬ জন সাধারণ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মানহানিকর স্লোগান দেওয়ায় বিএনপিপন্থী ১১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। মামলার প্রধান আসামি আইনজীবী নূরুল হক জানান, মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক। তাঁদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে। রাঙামাটিতে চার গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার হুমকিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ দৈনিক অবজারভারের জেলা প্রতিনিধি শেখ ইমতিয়াজ কামালের স্ত্রী আর্জিয়া আলম (আঁখি) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির প্রতারণার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে, উজ্জ্বল হোসেন (৩০), আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৮) ও আবদুল লতিফ (৩৫) নামের তিন যুবককে আলমডাঙ্গা পুলিশে গ্রেফতার করে।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ভিডিও ধারণ ও অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ও ১৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে যশোরের চৌগাছায় এক দম্পতিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জাপা নেতা ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার আজাদকে নিয়ে ফেসবুকে বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জসিম উদ্দিন (৩৫) নামের এক শ্রমিক লীগ নেতাকে নেত্রকোনার পূর্বধলা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। জাপা নেতা ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। জামালপুরের মাদারগঞ্জে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে লাল মিয়া নামের এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আনিছুর রহমান আনিছ বাদী হয়ে লাল মিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর লেখা ও ছবি পোস্ট করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় আবদুল মুমিন (৪০) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে তার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয় যেখানে তিনি করোনা নিয়ে মিথ্যে তথ্য প্রচার করছেন বলে জানা যায়। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
সংঘটিত অপরাধ দন্ডবিধি আইনে মামলা না করে বরং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের চিত্রটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে যা হয়রানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য।
সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশে হামলা
এ মাসে স্বাধীন সাংবাদিকতার ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অন্তত দুইটি ঘটনায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে, হুমকি ও হয়রানিমুলক মামলার শিকার হয়েছেন অপরদিকে রাঙ্গামাটিতে ৪ জন গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করা হয়েছে যা ছিল উদ্বেগজনক।
শরীয়তপুর সদর উপজেলায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি এবং শরীয়তপুর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রোকনুজ্জামান পারভেজ (৪০) নামের এক সাংবাদিক তার নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে থাকাকালিন সময়ে হঠাৎ দোকানের সামনে শরীয়তপুর পৌরসভার উত্তর পালং গ্রামের আবুল কাশেম মাদবরের ছেলে নাজমুল মাদবর ও নাঈম মাদবরের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লোক এসে এক নারীকে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করছিল। আত্মরক্ষা করতে সাংবাদিক পারভেজের দোকানে ঢুকে পড়েন ওই নারী। দোকানের ভেতরে ঢুকেও তারা পিটাতে থাকে। তখন আক্রমণকারীদের দোকান থেকে বের হতে বলেন পারভেজ। পরে ‘ভিডিও করছস কেন’ বলে পারভেজকে কিল-ঘুষি মারে ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে তারা। খবর পেয়ে পালং মডেল থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে আহত অবস্থায় পারভেজকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তা ছাড়া পারভেজের দোকানের ক্যাশে রাখা ও সঙ্গে থাকা নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
নেত্রকোণার দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার দুর্গাপুর উপজেলা প্রতিনিধি কলি হাসান ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে হাসপাতাল গেটের সামনে চায়ের দোকানে বসে অন্যদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত করে। সঙ্গে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। সাংবাদিক কলি হাসানের স্ত্রী সাজেদা আক্তার দাবি করেন, ‘আব্দুল হান্নান একজন চোরাকারবারী। রাতের আঁধারে বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি করে থাকেন। ওইসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরী শেষে তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কলি হাসানের উপর ক্ষিপ্ত হন। “সুযোগমত পাইলে খুন করে লাশ গুম” করে ফেলবে এমন হুমকিও দিয়ে আসছেন।’ এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিককে আরও হয়রানি করতে উল্টো মামলা দায়ের করেছেন আব্দুল হান্নান।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে হামলা, হুমকি, হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার সামিল।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর
গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্নস্থানে হিন্দু ধর্মালম্বী সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ২১ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ায় রাতের আঁধারে একটি পূজামণ্ডপে ঢুকে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটকের খবর জানা যায় নাই। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার শুকতাহার মধ্যপাড়া বারোয়ারি মন্দির ও শুকতাহার সর্বজনীন দুর্গামন্দির দুটির প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শামসুল আলম মণ্ডল ওরফে লাল বাবু (৩৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকালে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দুটি মন্দিরে গিয়ে প্রতিমাগুলোর মাথা-হাতসহ বিভিন্ন অংশ ভাঙা দেখতে পান। অপর একটি ঘটনায় সামাজিক দলাদলিতে অংশ না নেওয়ায় মাগুরা সদরের শিমুলিয়া গ্রামের স্থানীয় সমাজপতিরা পরিমল রায় নামের এক সংখ্যালঘু কৃষক পরিবারকে ছয় মাসেরও অধিক কাল যাবত একঘরে করে রেখেছে। এমএসএফ মনে করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ধর্মান্ধ শক্তির ইন্ধনে এ ধরণের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
গণপিটুনি
সেপ্টেম্বর, ২০২১ মাসের অন্যতম একটি উদ্বেগজনক বিষয় ছিল গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনীর ঘটনাগুলোকে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড বলে এমএসএফ মনে করে। এমএসএফ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে অন্তত ৬টি গনপিটুণির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৩ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছেন। চুরি বা ডাকাতির সন্দেহে গনপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর, দিবাগত রাত ৩টার দিকে কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের নোয়াপাড়া গ্রামে এক প্রবাসীর বারান্দার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করার সময় শব্দ হলে প্রবাসীর স্ত্রী চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে ব্যক্তিটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করলে পাশের একটি বিলে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নিহত চোরের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
১২ সেপ্টেম্বর, ভোরে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণের পশ্চিম দত্তরাইল গ্রামে ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। অপরদিকে ডাকাত দলকে ধাওয়া করতে গিয়ে পাঁচ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
নারায়নগঞ্জের বন্দরে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুড়ে ফেলে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে টিকটক ভিডিও তৈরি করার সময় এলাকাবাসীরা দুই শিশু কিশোর ও একজন যুবককে ১ সেপ্টেম্বর, আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের নিকট সোর্পদ করে। ২ সেপ্টেম্বর, পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন পালোয়ান গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।
আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি ঘটনা ঘটিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারী অপরাধ। গণপিটুনির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে গণমাধ্যমে জানা যায়নি।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ডেইলি ষ্টার, কালের কন্ঠ, আমাদের সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক মানবজমিন, সমকাল, ইত্তেফাক, ঢাকা ট্রিবিউন ও অন্যান্য জাতীয় দৈনিকসমূহ প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে উপরোক্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়াও প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই স্থানীয় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে তা ভেরিফাই করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
Endless gratified thanks for reading / watching /listening
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA