আদালতে উপস্থিত না থাকলেও যাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য
যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্ব মীমাংসা করার জন্য একটাই উপায় আর সেটি হচ্ছে সাক্ষ্য প্রমাণ। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যেকোনো ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। অন্যথায় কেবল এক পক্ষের কথা শুনে অন্য পক্ষকে দোষারোপ করা আবার আরেক পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে বিপরীত পক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা ছাড়া কোন গতি থাকবে না। অতীতের বিচার ব্যবস্থায় সাক্ষ্য প্রমাণের প্রচলন যতদিন ছিল না, ততদিনই বিচার ব্যবস্থা ছিল আরেকটি অবিচারের কারখানা। বলা রাখা ভালো, কেবলমাত্র যুক্তি দিয়েও কোন বিরোধ বা মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না। কেননা, যুক্তি কেবলই ডিবেট তথা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় খাটে, আদালতে যুক্তি প্রমাণ ব্যতীত কেবল যুক্তি তর্ক করে মামলার বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।
সাক্ষ্য
প্রমাণের ভিত্তিতে কোন মামলা প্রমাণ করতে হলে মৌখিক বা লিখিত সাক্ষ্য দিয়ে
তা প্রমাণ করতে হবে। সাক্ষ্য আইনের ৬০ ধারা অনুসারে আদালতে কোন মামলার
বিষয়বস্তু প্রমাণ করার জন্য, সাধারণত মৌখিক সাক্ষ্য অবশ্য প্রত্যক্ষ হবে।
অর্থাৎ, সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেবে কেননা মাধ্যমিক মৌখিক
সাক্ষ্য বা শ্রুতি মূলক সাক্ষ্য আদালতে নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কিছু কিছু
ক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তিকে সাক্ষী রূপে ডাকা যায়না, তাদের লিখিত বা মৌখিক
বিবৃতি প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা
অনুসারে, যেসব ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষী হিসেবে ডেকে সাক্ষ্য গ্রহণ
করা না গেলেও তাদের সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হবে এবং মামলা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট
হবে, তাদের লিস্ট নিম্নরূপ:
- যদি উক্ত সাক্ষী মৃত্যুবরণ করেন,
- যদি উক্ত সাক্ষী নিখোঁজ থাকে,
- যদি উক্ত সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে,
- যদি উক্ত সাক্ষীকে হাজির করার সময় ও আর্থিকভাবে ব্যয় সাপেক্ষ,
মৃত্যুকালীন ঘোষণা যেভাবে এবং যখন প্রাসঙ্গিক হবে:
সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী, যে সকল
ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষী হিসেবে ডেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা না গেলেও
তাদের সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হবে এবং মামলা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হবে, তাদের
মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হচ্ছে মৃত্যুকালীন ঘোষণা। নিম্নোক্ত কয়েকটি উপায়ে
মৃত্যুকালীন ঘোষণা প্রাসঙ্গিক হবে:
- যদি উক্ত সাক্ষীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বা যে ঘটনার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে সেই সম্পর্কে বিবৃতি দেওয়া হয়, তার উক্ত সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হবে,
- যদি উক্ত সাক্ষী বিবৃতি দানকারী হিসেবে তার স্বাভাবিক কাজকর্মে নিয়ম অনুসারে কোন বিবৃতি দিয়ে থাকে অথবা তা স্বাভাবিক কাজকর্মে নিয়ম অনুসারে কোন খাতা বা দলিলে লিপিবদ্ধ করে থাকে তবে তা প্রাসঙ্গিক হবে।
- যদি উক্ত সাক্ষী তার বিবৃতি দানকারীর আর্থিক বা মালিকানা-গত স্বার্থের পরিপন্থী হয় বা বিবৃতি যদি এমন হয় যে, তা সত্য হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা ক্ষতিপূরণের মামলা হতে পারে তা প্রাসঙ্গিক হবে।
- যখন বিবৃতিটা জনগণের অধিকার প্রথা বা সাধারণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সম্পর্কে হয়।
- যদি বিবৃতি বা সাক্ষ্য প্রমাণটি হয়ে থাকে বৈবাহিক বা দত্তক সম্পর্কের অস্তিত্বে বিষয়ে হয়।
- যদি বিবৃতি বা সাক্ষ্য প্রমাণটি পারিবারিক বিষয়ে কোন দলিলে উল্লেখ করা হয়।
- যখন কোন দলিল উইল বা লিপিভুক্ত হয় যা ধারা ১৩(ক){সাক্ষ্য আইনের ধারা ১৩ বলা হয়েছে, যখন অধিকার বা প্রথা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে, তখন যে সকল ঘটনা প্রাসঙ্গিক: যেখানে প্রশ্ন হচ্ছে, কোন অধিকার বা প্রথার অস্তিত্ব আছে কিনা, সেখানে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলি প্রাসঙ্গিক: (ক) যে কারবার দ্বারা সংশ্লিষ্ট অধিকার বা প্রথা সৃষ্টি হয়েছে, দাবি করা হয়েছে, সংশোধন করা হয়েছে, স্বীকৃত হয়েছে, ঘোষণা করা হয়েছে অথবা অস্বীকৃত হয়েছে, অথবা তার অস্তিত্বের সাথে যারা অসঙ্গতিপূর্ণ।} এ বর্ণীত কোন কাজের সাথে জড়িত।
- যদি সে বিবৃতি কিছু ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত হয়ে থাকে এবং বিচার্য বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক কোন ধারনা ব্যক্ত করে থাকে।
কখন প্রদত্ত সাক্ষ্য পরবর্তীতে মামলায় প্রমাণের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে
আমরা সাধারণত জানি যে, পূর্বের মামলার
রায় পরবর্তী একই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রিসিডেন্ট বা নজীর হিসেবে ব্যবহার
করা যাবে। সাক্ষ্য আইনের ৩৩ ধারায় এমনি কিছু রয়েছে যা মামলার রায়ের মত করে
পূর্বের মামলায় ব্যবহৃত সাক্ষ্যও পরবর্তী মামলায় ব্যবহার করা যাবে এবং
প্রাসঙ্গিক হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, পূর্বের মামলায় ব্যবহৃত কোন ব্যক্তির
সাক্ষ্য বা বিবৃতি পরবর্তী মামলায় ব্যবহার করতে হলে, উক্তি ব্যক্তিকে হতে
হবে,
– মৃত বা
– তার সন্ধান পাওয়া না যায় বা
– যে পরে সাক্ষ্য দিতে অসমর্থ হয়ে পড়ে বা
– প্রতিপক্ষ তাকে আটকে রাখে বা যুক্তিসঙ্গত কারণে তাঁকে আদালতে উপস্থিত করার সময় এবং ব্যয় সাপেক্ষ হয়।
তাহলে এ ধরনের সাক্ষীর পূর্বের দেওয়া প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য পরবর্তী পর্যায়ে প্রমাণের জন্য প্রাসঙ্গিক হবে। উল্লেখ্য, আরও বাড়তি তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে:
- পরবর্তী মামলার মধ্যে অথবা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের মধ্যে হতে পারে হতে হবে।
- পূর্বে সাক্ষ্য দেওয়া সাক্ষীকে প্রতিপক্ষরা জেরা করার সুযোগ পেতে হবে এবং
- উভয় মামলার বিচার্য বিষয় প্রধানত একই ধরনের হতে হবে।
তবেই কেবল পূর্বের মামলায় ব্যবহৃত সাক্ষ্যও পরবর্তী মামলায় ব্যবহার করা যাবে এবং প্রাসঙ্গিক হবে।
কারো কারো
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যুকালীন ঘোষণা তো বুঝলাম,
কিন্তু মৃত্যুকালীন ঘোষণা দেওয়ার পর যদি ঐ ব্যক্তির না মারা যায়, তাহলে তার
ঘোষণা বা বিবৃতি সাক্ষ্য হিসেবে কতটা গ্রহণযোগ্য?- উত্তর হচ্ছে, সাক্ষ্য
আইন এর ৩২ ধারা অনুযায়ী, কোন আহত ব্যক্তি তার জখমের কারণ সম্পর্কে বক্তব্য
দিলে তা মৃত্যুকালীন ঘোষণা হতে পারে যদি পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি মারা যায়
কিন্তু সে আহত ব্যক্তি যদি বেঁচে থাকে তবে তখন তার বক্তব্য মৃত্যুকালীন
ঘোষণা বলে গণ্য হবে না।
Endless gratified thanks for reading / watching /listening
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA