কলা গাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করেন মৌলভীবাজারের রাধাবতী দেবী - Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Latest

Monday, April 10, 2023

কলা গাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করেন মৌলভীবাজারের রাধাবতী দেবী


কলা গাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করেন মৌলভীবাজারের রাধাবতী দেবী

Published :

Updated :

প্রথমে কলা গাছের তন্তু সংগ্রহ, তা থেকে সুতা তৈরি, তারপর একটি আস্তো শাড়ি বানিয়ে ফেলা - সৃজনশীল এই কাজ করে নজর কেড়েছেন এক বাংলাদেশি নারী। 

FE

রাধাবতী দেবী, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাঝেরগাঁওয়ের বাসিন্দা, মাত্র আট দিনেই সক্ষম হয়েছেন এরূপ একটি ভিন্নধর্মী কাজ করতে। আর এতে সহায়তা দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, খবর নিউজবাংলা২৪ এর।

তাঁতের শাড়ির জন্য এমনিতেই সুনাম রয়েছে বাংলাদেশি তাঁতিদের। এখানকার জামদানি বিশ্বজুড়েই সমাদৃত। হাতে বোনা শাড়ির এই ঐতিহ্য চলে আসছে শত শত বছর ধরেই, যেমনটি হতো মুঘল আমলের মসলিনের বেলায়। বহুবছর পর এখন যখন মসলিনের পুনর্জীবন নিয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তারা উচ্ছ্বসিত, তখন আলোড়ন তুললো এই কলা গাছের তন্তু থেকে তৈরি শাড়ি।

এদিকে নিজের এই সাফল্যে খুশি রাধাবতী। তিনি নিউজবাংলা২৪-কে বলেন, “আট দিনে এই শাড়িটি তৈরি করেছি। প্রথম যখন এই চ্যালেঞ্জ নিই তখন আমার প্রতিবেশী বা সহকর্মী বলেছিল কঠিন কাজ সফল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে পারব। তবুও প্রথমে কিছু দ্বিধা ছিল । এখন সবাই এত প্রশংসা করছেন যে, খুব ভাল লাগছে। আমিই প্রথম কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করেছি।”

দেশে হাতে বোনা শাড়ির শিল্পে রাধাবতীর এই শাড়ি একটি চমৎকার সংযোজন যার পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন সে কথাই জানিয়েছেন। রাধাবতী দেবীর তৈরি এই পণ্যটিকে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি, জানান আরো বড় পরিসরে তাঁত বসিয়ে এই শাড়ি উৎপাদন করার পরিকল্পনার কথা। বুটেক্স ও সরকারি সহায়তায় এই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরো মানসম্মত করে একে দেশের বস্ত্র শিল্পে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করার ভাবনাও রয়েছে। 

একটি কলাগাছ থেকে ২০০ গ্রামের মতো সুতা তৈরি হয়। আর একটি শাড়ি তৈরিতে প্রায় ১ কেজির মতো সুতা প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, একটি শাড়ি তৈরিতে প্রয়োজন ৫টি কলাগাছ। সর্বসাকুল্যে একটি শাড়ি তৈরিতে খরচ হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হলে সে খরচ কমে যাবে অনেকাংশে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় রাধাবতীর তৈরি এই শাড়িই দেশের প্রথম কলাগাছের সুতায় তৈরি শাড়ি। প্রকল্পটি স্থানীয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে শুরু করা পাইলট প্রকল্পের একটি অংশ যার বেসরকারি সহায়ক সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, গ্রাউস ও উদ্দীপন। 

শাড়ি তৈরির এ প্রক্রিয়া অধিক সংখ্যক উদ্যোক্তার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাধাবতী দেবীর মাধ্যমে বান্দরবানে স্থানীয় নারীদের ১৫ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালাও করা হয়। মনিপুরীর জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মাঝেরগাঁওয়ের স্থানীয় তাঁতগুলোতেই প্রাথমিকভাবে শাড়ির কাজ করা হয়। 

তবে কলা গাছের সুতা উৎপাদন ও তা থেকে অন্যান্য পণ্য তৈরি হচ্ছে আরো আগে থেকেই। ২০২২ সালে সরকারি উদ্যোগে বান্দরবানে স্থানীয় নারীদের কলা গাছের সুতা থেকে নানারকম হস্তশিল্পজাত পণ্য, যেমন - শতরঞ্জি, জুতা, ম্যাট, শোপিস, বক্স, ব্যাগ, কলমদানি, ইত্যাদি তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এই শিল্প নিকটবর্তী অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে যায়। 

বর্তমানে দেশে তাঁতশিল্প চলছে ঝিমিয়ে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে আর সঠিক মূল্য না পেয়ে অনেক তাঁতিই পেশা পরিবর্তন করছেন। ফলে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প বিলীন হবার শঙ্কায় রয়েছে। 

রাধাবতী দেবীর কলা গাছের সুতা থেকে তৈরি এই শাড়ি ঝিমিয়ে পড়া তাঁত শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন কলা গাছের তন্তু থেকে যে সুতা তৈরি হয় তা বেশ শক্ত হয় যা শাড়ি তৈরির জন্য আদর্শ নয়। দেশের টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত একাডেমিক গবেষণা হলে, এবং পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে এই শিল্প কর্মসংস্থান তৈরি ও দেশীয় পণ্যের বাজারে বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হবে।

shuvrosaikat87@gmail.com

Source of The Financial Express


Endless gratified thanks for reading / watching /listening

No comments:

Post a Comment

Please validate CAPTCHA