আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ৪
তুমি
যে সেনা কর্মকর্তার ভাঙা ঘর জোড়া লাগিয়েছিলে, সেই তোমাকে সপরিবারে খুনের
উস্কানিদাতা! কী কঠিন হৃদয় তার! এই জন্যই বুঝি তিনি সানগ্লাসে চোখ ঢেকে
রাখতেন; চোখ দেখলেও নাকি খুনী চেনা যায়!
প্রবীর সিকদার
বঙ্গভবনের
সামনের সড়কটি এখন প্রাচীর তুলে বন্ধ করে অনেকটাই দুর্গ বানানো হয়েছে। আমি
পচাঁত্তরের জানুয়ারিতে প্রথম ঢাকায় ঢুকি। তখন বঙ্গভবনের সামনের সড়কটি
যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আমি কতদিন যে বিকেলে
নারিন্দার বাসা থেকে হেঁটে বঙ্গভবনের গেটের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থেকেছি, কখন
আমার পিতা মুজিব বেরুবেন! যতদূর মনে পড়ে দু’দিন আমি তাকে এক পলক করে দেখার
সুযোগ পেয়েছিলাম। একাত্তরের হারানো পিতা দর্শনের সেই আনন্দটা আজও আমাকে
কাঁদায়। নিরাপত্তার কোনো বাড়াবাড়ি নেই। আটপৌড়ে গাড়িতে আটপৌড়ে মেজাজে একজন
বিশ্বনেতা এইতো অফিস সেরে চলে গেলেন!
একদিন
বাসায় ফেরার পথে ওয়ারিতে একটি রিক্সার ধাক্কায় আমার মুখের খানিকটা জায়গা
কেটে গিয়েছিল। মুখের ওপর রক্তের রেখা! লুকোতে পারিনি। বলতে হয়েছিলো সব।
ছোটমামা গম্ভীর হয়ে বলেছিলেন, এটা কাউকে বলো না যে, রিক্সার ধাক্কায় তোমার
মুখ কেটে গেছে। এই শহরের নিয়ম, যারা রিক্সার সাথে এক্সিডেন্ট করে তাদেরকে
শহর থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমি বিশ্বাস করেছিলাম কথাটি। আমি স্কুলের
বন্ধুদেরও মুখে কাটা দাগের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।
একদিন
ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ‘মীরজাফর’ মোস্তাকের একটি বক্তব্য পড়লাম। মোস্তাক
তখন ‘রাষ্ট্রপতি’। জাতির পিতা প্রসঙ্গে সে বলেছে, জাতির পিতা, নানা, চাচা
থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। পিতা মুজিব! এই তোমার খন্দকার মোস্তাক! যার
বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ পেয়েও তুমি তাকে স্নেহ দিয়ে শুধরে নেয়ার কি
প্রানান্ত চেষ্টা করেছিলে!
পিতা মুজিব! দেশে ফিরে তুমি যে সেনা
কর্মকর্তার ভাঙা ঘর জোড়া লাগিয়ে বলেছিলে, আমার মেয়ে, ওকে নিয়ে বাসায় চলে
যা। সেই সেনা কর্মকর্তা তখন রাষ্ট্রের প্রধান ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তারই সুতোর
টানে নড়াচড়া করে মোস্তাক, সারাদেশ। ভাবতে হৃদয় ভেঙ্গে যায়, এমন একজন
মহৎপ্রাণ বাবাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন করার উসকানি দিতে পারলেন ওই সেনা
কর্মকর্তা! কী কঠিন হৃদয় তার! এই জন্যই বুঝি সানগ্লাসে চোখ ঢেকে রাখতেন!
চোখ দেখলেও নাকি খুনী চেনা যায়!
বঙ্গবন্ধুর সেই প্রিয় সেনা কর্মকর্তার ছবিতেও একদিন থুথু ছিটাতে পারিনি আতংকে, যদি কেউ দেখে ফেলে! কী অকৃতজ্ঞ, কী কৃতঘ্ন সন্তান আমি!
পিতা মুজিব, আমায় ক্ষমা কর তুমি, ক্ষমা কর।
Endless gratified thanks for reading / watching /listening
No comments:
Post a Comment
Please validate CAPTCHA