নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি? - Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Latest

Independent Human Rights Defender, Bangladesh

Our mission is: to advocate for the protection of human rights and to promote institutional democracy and good governance to build a strong foundation for our country. We envision a world where every child receives the same quality education regardless of their background through our "One World, One Identity, One Curriculum" initiative. We are committed to creating a protection system for minority communities in Bangladesh to ensure their safety and security.

Saturday, November 6, 2021

নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি?

 

আমায় ক্ষমা কর পিতা : শেষ পর্ব
'নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি?'

২০২১ আগস্ট ১৫ ০০:০০:৪৯
আমায় ক্ষমা কর পিতা : শেষ পর্ব'নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি?'

প্রবীর সিকদার

১৫ আগস্ট ১৯৭৫। ভোর ৬ টা ১ মিনিট। রেডিওতে ভেসে এলো সর্বকালের ভয়ংকর দুঃসংবাদ! 'আমি মেজর ডালিম বলছি, স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।' কথায় বলে, অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। খুনি মেজর ডালিমের হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেওয়া সেই ভয়ংকর ঘোষণায় পুরো বাংলাদেশ যেন পাথর হয়ে যায়! কিছু শকুনের উল্লাস ছাড়া কোথাও কোনও সাড়া শব্দ নেই। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে দুলতে যখন খুনি ডালিমের ঘোষণাটি সারা পৃথিবীর একটি হৃদয় বিদারক খবরে পরিণত হয়, তখন বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে তার হৃদস্পন্দন। এ কী খবর শুনছে বাংলাদেশ! পাকিস্তানি হায়েনারা ৩০ লাখ বাঙালি খুন করলেও বঙ্গন্ধুকে হত্যার সাহস পায়নি। এরা কোন কুলাঙ্গার বাঙালি, যারা এই জঘন্য কাজটি করলো!

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনি কর্নেল ফারুক এক সাক্ষাৎকারে যথার্থই বলেছিল, 'শেখ মুজিবকে আটক রেখে সরকার পরিবর্তন সম্ভব ছিল না।' ওদের টার্গেট ছিল খুন। খুন করেই ওরা সদম্ভ ঘোষণা দেয়। ওদের ওই সদম্ভ ঘোষণায় পুরো বাংলাদেশ পাথর হয়ে যায়। বিভ্রান্তির জালে জড়িয়ে যায় বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ খন্দকার মোশতাকই রাষ্ট্রপতি! বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীরাই মন্ত্রী! বঙ্গবন্ধুর লাশ সিঁড়িতে রেখেই ওদেরকে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী করা হয়! খুনিদের কি নিপুন ছক! খুন! ঘোষণা! বঙ্গবন্ধুর সহচরদেরই ক্ষমতায় দৃশ্যমান রাখা! শোকে পাথর বাংলাদেশে বিভ্রান্তির এই জাল ছড়িয়ে খুনিরা সফলও হয়। ভয় আতংকে কাঁদতেও ভুলে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে 'মিনি পাকিস্তান'-এর মোড়কে ঢুকিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয় ওরা! আর আমরা! সংকীর্ণ কিংবা দাপটে টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমে মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার একাকার হয়ে যাই! অলিখিত নির্দেশে নিষিদ্ধ হয়ে যায় জয়বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা! নিষিদ্ধ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারও! অভিনব এক জাতীয় দর্শনের প্রবক্তা হয়ে যান বঙ্গবন্ধু খুনের সরাসরি বেনিফিসিয়ারি জেনারেল জিয়া! ১৯৭১ এ অর্জিত বাংলাদেশের চাকা পঁচাত্তরে আবার দ্রুতই ঘুরতে থাকে উল্টো দিকে। জিন্দাবাদে ভরে যায় দেশ! আমরা সবাই 'নষ্ট' হয়েই রক্ষা করি নিজেদেরকে!

কথায় কথায় অনেকেই বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর কেটে গেল! কি পেলাম আমরা! অথচ আমরা বেমালুম ভুলে যাই, ১৯৭১ এর পর বাংলাদেশে একটি ভয়ংকর ১৯৭৫ এসেছিল! ১৯৭৫ শুধু জাতির পিতাকেই খুন করেনি, খুন করেছে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা সম্ভাবনাকেও! বঙ্গবন্ধু মুজিব খুন না হলে একাত্তরের বাংলাদেশ আজ কোথায় যেতো, এ হিসেব করতে আমরা ভুলে যাই! সর্বকালের সেরা বাঙালি একজন বিশ্বনেতাকে খুন করে আমরা যেন এখনো অনুতপ্ত নই!

পিতা! অনেক বিলম্বে হলেও আমরা তোমার খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছি। এখনো পালিয়ে বেঁচে আছে কয়েক খুনি। হয়তো ওরাও ঝুলবে। একাত্তরের ঘাতকদের যে বিচার প্রক্রিয়া তুমি শুরু করেছিলে, পঁচাত্তরে তোমাকে খুনের পর সেটি হারিয়েছিল পথ। আমরা একাত্তরের ঘাতকদেরও ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো শুরু করেছি। আমাদের কাণ্ডারি তোমারই রক্তের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। আমরা ছাড়ছি না তাকে! তোমার অসমাপ্ত কাজ তো তাকেই শেষ করতে হবে!

পিতা! তোমাকে হারানোর পর আমরা বড় বেশি নষ্ট হয়ে গেছি! তোমার বিরুদ্ধ স্রোতের রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদেরকে প্রলুব্ধ করে এই সর্বনাশটি করেছে। আমরা সুযোগ পেলেই নিজেদেরকে তোমার উত্তরসূরি বলে দাবি করি! কিন্তু তোমার জীবন দর্শন মেনে চলি না! তোমার বিশাল কর্মযজ্ঞের কোনও কৌশলই আমরা রপ্ত করি না! মুখে বেশ জোরেশোরেই 'জয় বাংলা' বলি। আর একই সঙ্গে তোমার খুনিদের ইচ্ছায় গড়ে ওঠা 'জিন্দাবাদ'-এর বলয়ের সাথে গোপন কিংবা প্রকাশ্য আঁতাত করে পথ চলি! আমি নিশ্চিত করেই জানি, তোমার আদর্শিক বলয় এতোটাই সুদৃঢ় যে, নষ্ট রাজনীতির ওই বৃত্ত একদিন হারিয়ে যাবেই। তারপরও আঁতাতের ওই অপরাজনীতির অভ্যাস ত্যাগ করতে পারিনি। অন্ধকারের নানা ঝামেলা সামাল দেয়ার জন্য আঁতাত বুঝি খুবই জরুরি! আর এই নির্লজ্জ বেহায়া হতেই কী আমরা তোমাকে খুন করেছি কিংবা তোমাকে রক্ষা করিনি? কী অকৃতজ্ঞ, কী কৃতঘ্ন সন্তান আমি!

পিতা, আমায় ক্ষমা কর তুমি, ক্ষমা কর।

 উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ

Endless gratified thanks for reading / watching /listening

No comments:

Post a Comment

Please validate CAPTCHA