তারেক রহমানের নেতৃত্বে এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ “সবার বাংলাদেশ” গড়ার স্বপ্ন, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ - Bangladesh HR Defender | Human Rights, Rule of Law & Accountability

Latest

Friday, December 26, 2025

তারেক রহমানের নেতৃত্বে এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ “সবার বাংলাদেশ” গড়ার স্বপ্ন, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ

অস্থির রাষ্ট্র থেকে স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ—এক স্বপ্ন, এক সম্ভাবনা, এক রাজনৈতিক রূপান্তর।


ভূমিকা: ইতিহাসের এক মোড়বদলের মুহূর্ত

২৫ ডিসেম্বর ২০২৫—এই দিনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কেবল একটি তারিখ নয়, বরং একটি গভীর প্রতীক। দীর্ঘ প্রায় সতেরো বছর প্রবাসে থাকার পর তারেক রহমান-এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়, যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্র রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বিভাজন, সহিংসতা ও মব ভায়োলেন্সের এক দীর্ঘ ছায়ার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করছে।

এই প্রত্যাবর্তন ছিল না নিছক ব্যক্তিগত—এটি ছিল রাজনৈতিক, নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক। কারণ তারেক রহমানের ফেরা এমন এক রাষ্ট্রে, যেখানে মানুষ ক্লান্ত—ভয়ের রাজনীতিতে, প্রতিহিংসার সংস্কৃতিতে, এবং বিভক্ত সমাজে। তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিনে প্রদত্ত বক্তব্য তাই কেবল একটি দলীয় ভাষণ ছিল না; এটি ছিল একটি জাতির সঙ্গে নতুন করে কথোপকথনের চেষ্টা।

এই প্রবন্ধে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, তাঁর ঐতিহাসিক বক্তব্য, এবং “সবার বাংলাদেশ” ধারণাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নচিত্র উপস্থাপন করা হবে—যেখানে অশান্তির বদলে শান্তি, সহিংসতার বদলে অহিংসা, আর বিভাজনের বদলে ভালোবাসা হবে রাষ্ট্রীয় দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু।

অধ্যায় এক: অস্থির রাষ্ট্রের বাস্তবতা—যে প্রেক্ষাপটে প্রত্যাবর্তন

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতা দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের স্থায়ী অস্থিরতায় আবদ্ধ। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থার সংকট, বিরোধী কণ্ঠের সংকোচন, সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ, বিচারবহির্ভূত সহিংসতা এবং ক্রমবর্ধমান মব ভায়োলেন্স—এই সব মিলিয়ে রাষ্ট্র এক ভয়ভিত্তিক কাঠামোর দিকে ধাবিত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে রাজনীতি মানুষের জীবনে আশার নয়, বরং আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিল। রাষ্ট্র যেন নাগরিকের রক্ষক না হয়ে শাসকের শক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন রাষ্ট্রের সামনে একটি প্রশ্ন তোলে—এই ফেরা কি কেবল ক্ষমতার রাজনীতির পুনরাবৃত্তি, নাকি এটি একটি নতুন রাজনৈতিক নৈতিকতার সূচনা?

https://www.reuters.com/resizer/v2/H736N3AUPBL6LLICYZZHKUTL6U.jpg?auth=5743200c3f51470fab8249dd1d0dab25d6443e348aeaefeefa2d322afa6bb0aa&quality=80&width=1080

অধ্যায় দুই: প্রত্যাবর্তনের প্রতীকী তাৎপর্য

তারেক রহমানের দীর্ঘ প্রবাসজীবন তাঁকে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু একই সঙ্গে এই প্রবাস তাঁকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন মডেল পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়।

তাঁর প্রত্যাবর্তন তাই কেবল একজন নেতার দেশে ফেরা নয়; এটি এক ধরনের রাজনৈতিক পুনঃপ্রবেশ, যেখানে অতীতের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা মুখোমুখি দাঁড়ায়। জনগণের একাংশের কাছে এই ফেরা নতুন আশার প্রতীক, আবার অন্য অংশের কাছে এটি সতর্কতার বিষয়। এই দ্বৈত প্রতিক্রিয়াই দেখায়—তারেক রহমানের রাজনীতি এখনও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যায় তিন: ঐতিহাসিক বক্তব্য—বাংলাদেশকে ঘিরে নতুন ভাষা

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে তারেক রহমান যে বক্তব্য দেন, তার মূল সুর ছিল বাংলাদেশ। তিনি দল বা প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র করে নয়, রাষ্ট্র ও জনগণকে কেন্দ্র করে কথা বলেন।

তিনি উচ্চারণ করেন—বাংলাদেশ সবার। এই দেশ কোনো একক দলের নয়, কোনো একক গোষ্ঠীর নয়। কৃষক, শ্রমিক, সংখ্যালঘু, নারী, তরুণ, ভিন্নমতাবলম্বী—সবাই এই রাষ্ট্রের সমান অংশীদার। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘদিনের “আমরা বনাম তারা” রাজনীতির বিপরীতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শনের কথা বলেন।

এই “সবার বাংলাদেশ” ধারণা কেবল রাজনৈতিক স্লোগান নয়; এটি একটি নৈতিক অবস্থান—যেখানে রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব হবে সবাইকে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া।

https://www.rjtravelagency.com/wp-content/uploads/2023/09/Bangladesh-flag.jpg

অধ্যায় চার: সহিংসতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান

তার বক্তব্যের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ ছিল সহিংসতার বিরুদ্ধে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান। তিনি মব ভায়োলেন্স, রাজনৈতিক প্রতিশোধ এবং ঘৃণাভিত্তিক রাজনীতিকে রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হিসেবে চিহ্নিত করেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে গুজব, উসকানি ও রাজনৈতিক বিভাজন থেকে সহিংসতা ছড়িয়েছে—তা কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তাই নয়, সামাজিক বন্ধনকেও ধ্বংস করেছে। তারেক রহমান বলেন, অশান্তির বদলে শান্তি, ঘৃণার বদলে ভালোবাসা—এই মূল্যবোধকে রাষ্ট্রের নীতিতে রূপ দিতে হবে।

এই বক্তব্য তাঁকে কেবল একজন দলীয় নেতা নয়, বরং একটি নৈতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ধারক হিসেবে তুলে ধরে।

অধ্যায় পাঁচ: “I have a plan”—নেতৃত্বের ভাষা ও তাৎপর্য

তার বক্তব্যে একটি বাক্য বিশেষভাবে আলোচিত হয়—
“I have a plan for my country.”

এই বাক্য অনেকের মনে অনুরণন তোলে, কারণ এটি স্মরণ করিয়ে দেয় Martin Luther King Jr.-এর ঐতিহাসিক উচ্চারণ—“I have a dream.”

এখানে “I” শব্দটি একদিকে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, অন্যদিকে সমালোচনার বিষয়। সমালোচকরা মনে করেন, “We have a plan” বললে বক্তব্যটি আরও গণতান্ত্রিক ও সমষ্টিকেন্দ্রিক হতো। এই সমালোচনা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আধুনিক নেতৃত্ব ব্যক্তির চেয়ে সমাজকে সামনে রাখে।

তবু বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি দিকনির্দেশনাহীনতা ছিল। সেই শূন্যতায় “I have a plan” অনেকের কাছে নেতৃত্বের দৃঢ়তার বার্তা হিসেবেও ধরা দিয়েছে।

অধ্যায় ছয়: নেতৃত্বের রূপান্তর—অতীত থেকে ভবিষ্যৎ

তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক আছে, ভুল আছে, এবং সমালোচনাও আছে। কিন্তু নেতৃত্বের বড় পরীক্ষা হলো—কে নিজের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে রূপান্তর করতে পারে।

প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে সেই সুযোগ দিয়েছে। প্রশ্ন হলো—তিনি কি প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে এসে নীতি, প্রতিষ্ঠান ও আইনভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের পথে হাঁটবেন? যদি তা পারেন, তবে তাঁর নেতৃত্ব একটি রূপান্তরিত রাষ্ট্রনায়কত্বের দিকে এগোতে পারে।

অধ্যায় সাত: “সবার বাংলাদেশ”—স্বপ্নের রাষ্ট্রের কাঠামো

১. আইন ও বিচার

একটি স্বপ্নের বাংলাদেশে আইনের শাসন হবে নিরপেক্ষ। রাজনৈতিক পরিচয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে না। বিচারবহির্ভূত সহিংসতা থাকবে না; ন্যায়বিচার হবে নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

২. সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রের পূর্ণ নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা ও মর্যাদা পাবে। তাদের ভয় নয়, আস্থা হবে রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি।

৩. নারী ও তরুণ

নারী ও তরুণরা হবে রাষ্ট্র নির্মাণের কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নেতৃত্বে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। তরুণদের জন্য রাজনীতি হবে ভয় নয়, সম্ভাবনার ক্ষেত্র।

৪. মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যম

ভিন্নমত রাষ্ট্রের শত্রু নয়—এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে। গণমাধ্যম হবে মুক্ত, দায়িত্বশীল ও নিরাপদ।

৫. সামাজিক সম্প্রীতি

ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য হবে শক্তি, দুর্বলতা নয়। মব ভায়োলেন্সের বিপরীতে সামাজিক সংলাপ ও আইনগত ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

অধ্যায় আট: বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ

এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয়। তারেক রহমানের সামনে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ—

  • দলীয় রাজনীতির ভেতরে গণতান্ত্রিক সংস্কার

  • অতীতের ভুলের দায় স্বীকার ও জবাবদিহি

  • প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার

  • রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করলে “সবার বাংলাদেশ” কেবল একটি আবেগঘন বয়ান হয়েই থাকবে।

অধ্যায় নয়: জাতির মানসিক জাগরণ ও নতুন আশা

তার বক্তব্যের সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল মানুষের মনে। দীর্ঘদিন হতাশ ও ভীত একটি জাতি নতুন করে আশার ভাষা খুঁজে পেয়েছে। এই আশা যদি সংগঠিত রাজনৈতিক কর্মসূচি ও নৈতিক নেতৃত্বে রূপ নেয়, তবে বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের পথে ফিরতে পারে।

উপসংহার: স্বপ্ন থেকে রাষ্ট্র—একটি যৌথ দায়িত্ব

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। তিনি যদি “I have a plan” থেকে “We have a plan”-এ নেতৃত্বকে রূপান্তর করতে পারেন, যদি অহিংসা ও অন্তর্ভুক্তিকে কেবল বক্তব্য নয়, রাষ্ট্রীয় নীতিতে রূপ দেন—তবে সত্যিই একটি “সবার বাংলাদেশ” গড়া সম্ভব।

এই বাংলাদেশ হবে এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে পথহারা মানুষ সঠিক পথ খুঁজে পাবে, ঘৃণার বদলে ভালোবাসা ছড়াবে, এবং সহিংসতার পরিবর্তে শান্তি হবে জাতীয় পরিচয়।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব কোনো একক নেতার নয়—এটি পুরো জাতির সম্মিলিত অঙ্গীকার।


উপস্থাপন করেছেন

মিনহাজ সামাদ চৌধুরী
স্বাধীন মানবাধিকার কর্মী, বাংলাদেশ

কেন্দ্রীয় বিষয়:
রাষ্ট্রীয় সহিংসতা • গণমাধ্যমের স্বাধীনতা • সংখ্যালঘু অধিকার • রাজনৈতিক অধিকার • গণতান্ত্রিক জবাবদিহি



Related Topics: 


বাংলাদেশে মব ভায়োলেন্স: কেন স্বাধীন আন্তর্জাতিক নজরদারি এখন একটি গণতান্ত্রিক অপরিহার্যতা

বাংলাদেশে মব ভায়োলেন্সের উত্থান: রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, বিচারহীনতা ও সহিংসতার স্বাভাবিকীকরণ


তারেক রহমানের জনপরিচয়ের কৌশলগত বিবর্তনের মূল্যায়ন



No comments:

Post a Comment

Please validate CAPTCHA